কাগজে–কলমে জাতীয় পার্টি ২০১৪ সাল থেকেই দেশের প্রধান বিরোধী দল। দশম ও একাদশ দুই সংসদেই আওয়ামী লীগের পর তাদের আসনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি, আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে তাদের কপালে জোটে মাত্র ৭টি আসন। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিই যে সবচেয়ে বড় বিরোধী শক্তি, তা আওয়ামী লীগও অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু গত ১৪ বছর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের ‘প্রধান বিরোধী দল’ হতে পারেনি। তা–ও এত দিন বর্তমান সংসদে বিএনপি ছিল, কিছুটা গরম কথাবার্তা হতো, এখন সেটাও নেই।
জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের একটি গান আছে,
‘এ কোন সকাল রাতের চেয়েও অন্ধকার
ও কি সূর্য নাকি স্বপনের চিতা
ও কি পাখির কুজন নাকি হাহাকার’
জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রে এমনই বিস্ময় জাগে; এ কোন বিরোধী দল সরকারি দলের চেয়েও সরকার তাঁবেদার! আমাদের মনে আছে দশম সংসদের সময়ের তখনকার প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ বলেছিলেন, ‘আমরা যখন বাইরে যাই, তখন সবাই বলে তুমি কোথায় আছ, সরকারে না বিরোধী দলে? আমরা তো বলতে পারি না।’ আমরা বুঝতে পারি সেই সংসদে কেমন ছিল জাতীয় পার্টির ভূমিকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংবাদপত্রে শিরোনাম ছিল, ‘সরকারে না বিরোধী দলে, প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত চায় জাতীয় পার্টি’। মানে জাতীয় পার্টি সংসদে কোন দিকে থাকবে তা–ও নির্ভর করে প্রধানমন্ত্রীর ওপর।
তারপরও নানা সময়ে ‘সত্যিকার বিরোধী দল’ হওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বা সরকারি দলের ইচ্ছা বা সিদ্ধান্তের বাইরে এই দলটি কখনো যেতে পারেনি। দেশের ‘প্রধান বিরোধী দলটি’ নিয়ে এখনো ‘খেলাধুলা’ চলছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে দলটিতে এখন কোনো চেয়ারম্যানই নেই!
একটা দেশ কতটা গণতান্ত্রিক, তা মাপার একটি পথ হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও শক্তি সেখানে কতটা সহজে তাদের তৎপরতা চালাতে পারে তা বিবেচনায় নেওয়া। সেই হিসেবে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মান এখন কতটা নেমেছে, তা বুঝতে কারও কষ্ট হওয়ার কথা নয়। আন্তর্জাতিক সূচকগুলোতেও এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।