সম্প্রতি বিএনপি ঢাকার গোলাপবাগে সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিজেদের বিভাগীয় কর্মসূচির সমাপ্তি টেনে। সেই সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে 'রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা' তুলে ধরার কথা ছিল। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফলে এই প্রক্রিয়া কিছুদিন পিছিয়েছে বলে আমার ধারণা।
বিএনপি ঘোষিত প্রস্তাবে ২৭টি দফা রয়েছে। এই রূপরেখার দিকে তাকালে পরিস্কার বোঝা যায়, এটি মূলত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ঘোষিত '১৯ দফা' এবং বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ঘোষিত বিএনপির 'ভিশন-২০৩০'-এর আলোকে প্রস্তুত। এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পরবর্তী সময়ে অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক সংস্কার প্রস্তাব ও উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকাশ করা হবে।
বিএনপি ঘোষিত ২৭ দফার প্রথমেই 'সংবিধান সংস্কার কমিশন' গঠনের উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা দেখেছি, ১৯৭১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৫১ বছরে এমন কোনো সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি, যারা দেশ ও জাতির প্রতি সামগ্রিক দায়িত্ববোধ থেকে কাজ করেছে। প্রতিটি সরকার দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই কাজ করেছে। এই সময়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভাবতে অবাক লাগে, এই দীর্ঘ বছরে একটি জাতীয় আদর্শ, জাতীয় সামরিক নীতি, উন্নয়ন কৌশল, জাতীয় পলিসি এমনকি জাতির পিতৃপুরুষদের ব্যাপারেও ঐকমত্য তৈরি হয়নি। সংবিধান এতই মর্যাদা হারিয়েছে যে, ক্ষমতাসীনরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের নিজ স্বার্থে ১৬বার এটি কাটাছেঁড়া করেছে। এখন এই সংবিধানটি স্বৈরাচারের কাঠামোতে কেন্দ্রীভূত হয়েছে বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। সে কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি, যখনই কোনো রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি ও জনগণ তাদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেমেছে, তখনই ক্ষমতাসীনরা তা নির্মমভাবে প্রতিহত করেছে। এমন প্রেক্ষিতে বিএনপির 'সংবিধান সংস্কার কমিশন' গঠন করার কথাকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে হবে।
বিএনপি বলছে, সব দল ও মতের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও সম্প্রীতিমূলক 'রেইনবো নেশন' প্রতিষ্ঠা করা হবে। এটা যদি সত্যিকার অর্থেই করা সম্ভব হয়, তবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন হবে।
আওয়ামী লীগ বর্তমানে যেভাবে টানা ক্ষমতায় আছে, সেভাবে আগামী নির্বাচনকেও একই রকম চতুরতায় করতে চায়। সেখানে বিএনপি তাদের রূপরেখায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে স্থায়ী সাংবিধানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে 'নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার' ব্যবস্থার কথা বলছে।