লোড শেডিংয়ে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছে বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জবাসী। দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলেও রাতে থাকে অতিরিক্ত দুই ঘণ্টা। গড়ে ২৪ ঘণ্টায় লোড শেডিং দেওয়া হচ্ছে ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা। ফলে একদিকে বিদ্যুৎ না থাকা, অন্যদিকে তীব্র দাবদাহে দুর্ভোগ নেমে এসেছে জনজীবনে।
অপরদিকে বর্তমানে ভরা মৌসুম চলছে ইলিশ আহরণের। বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করেই চলে ইলিশ আহরণ। কারণ বরফ না হলে মাছ আহরণের পর তা সংরক্ষণ করা মোটেই সম্ভব না। বিদ্যুৎসংকটে বরফ কলগুলোতে উৎপাদন প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে বরফ না পেয়ে অনেক জেলের লাখ লাখ টাকার ইলিশ মাছ নষ্ট হয়েছে। পর্যাপ্ত বরফ সরবরাহ না থাকায় ভরা মৌসুমেও শত শত ফিশিং ট্রলার এখনো সাগরে যেতে পারেনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার ৯টি উপজেলায় গড় হিসাবে দিন-রাত মিলিয়ে বাগেরহাট সদরে দুই ঘণ্টা, মোংলায় এক ঘণ্টা, রামপালে দুই ঘণ্টা, ফকিরহাটে তিন ঘণ্টা, মোল্লাহাটে তিন ঘণ্টা, চিতলমারীতে দুই ঘণ্টা, কচুয়ায় তিন ঘণ্টা লোড শেডিং দেওয়া হয়। কিন্তু শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলায় লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে গড়ে ১৭ ঘণ্টা। লোড শেডিংয়ের এমন বৈষম্যে দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুতের লোড শেডিং দেওয়ার দাবি জানান তারা।
শরণখোলার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক শেখ মোহাাম্মদ আলী বলেন, জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্তকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই। তবে বৈষম্যমূলক লোড শেডিংয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যেই সরকারবিরোধী চক্র রয়েছে।
মোরেলগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মেহেদী হাসান লিপন বলেন, জাতীয় গ্রিডের অজুহাত দিয়ে আমাদের এই দুই উপজেলায় শিডিউলের চেয়ে অতিরিক্ত লোড শেডিং দেওয়া হচ্ছে।
শরণখোলা উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান বাবুল বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী রাত ৮টার মধ্যে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ করা হয়। কিন্তু এরপর সারা রাত বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। এতে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিয়ম মাফিক লোড শেডিং দেওয়ার দাবি জানাই।
মেসার্স মেঘা বরফ কলের মালিক মো. গোলাম মোস্তফা তালুকদার বলেন, দিনে কিছুটা বরফ জমা হলেও রাতে বিদ্যুৎ না থাকায় তা আবার গলে যায়।
শরণখোলা মৎস্য আড়ৎদার সমিতির সভাপতি আ. রহিম হাওলাদার বলেন, বরফের অভাবে লাখ লাখ টাকার মাছ নষ্ট হচ্ছে। মৌসুম চলে যাচ্ছে, অথচ শত শত ট্রলার সাগরে যেতে পারছে না।
শরণখোলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্তা বলেন, এত বেশি লোড শেডিং দেশের অন্য কোথাও দেওয়া হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না। বিষয়টি জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে। এভাবে লোড শেডিং দেওয়া হলে সরকারের এত উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে