আমাদের কবি নির্মলেন্দু গুণ একটি কবিতায় লিখেছেন ‘যুদ্ধ মানে শত্রু শত্রু খেলা/যুদ্ধ মানে আমার প্রতি/তোমার অবহেলা।’ তিনি ঠিকই বলেছেন, যুদ্ধ মানে মানুষের বিরুদ্ধে মানুষের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা, হত্যা, ধ্বংস। যুদ্ধ মানুষের মনের গভীরে অন্যের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে। যুদ্ধে সবচেয়ে বড় ক্ষতি সত্যের তিরোধান, মিথ্যার উপস্থিতি। এতে মানুষের মগজে, হৃদয়ে, কোষে কোষে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় তাতে মানুষের বিবেক হারিয়ে যায়। হারিয়ে যায় লাখ লাখ বছরের বিবর্তন ধারায় সৃষ্টি মানুষের মনের ভেতর গড়ে ওঠে ভালোবাসা, সাধুতা, স্বচ্ছতা। যেই মানুষ একদিন একে অপরের প্রতি সহানুভূতি, সহমর্মিতা প্রকাশ করত, তারা এখন পরস্পরকে ঘৃণা করে।
যুদ্ধ অতীতেও হয়েছে। সেই যুদ্ধ আর এখনকার যুদ্ধ এক নয়—বিরাট পার্থক্য। তখন রাজায় রাজায় যুদ্ধ হতো, তাতে সাধারণ-মানুষের ভ্রুক্ষেপ ছিল না। ১৯৫৭ সালে যখন পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ও রবার্ট ক্লাইভের সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়, তখন পাশেই খেতখামারে কৃষকেরা কাজ করেছেন। এখন যুদ্ধে যেসব যুদ্ধাস্ত্র, গোলাবারুদ ব্যবহৃত হয়, তাতে সংঘটিত হয় অসংখ্য মৃত্যু, ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি। সারা পৃথিবীতে নেমে আসে অর্থনৈতিক বিপর্যয়।