নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ আজ শেষ হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে শেষ দিনে আজ দুই ঘণ্টা করে আলোচনার জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু পৃথকভাবে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পরে অনুষ্ঠিত আগের দুই সংসদ নির্বাচনের মতোই দলীয় সরকারের অধীনে ভোট চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে তারা ৩০০ আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট চায়। তবে তাদের ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো এবার অভিন্ন অবস্থানে নেই। ১৪ দলীয় জোট নাম হলেও এই জোটের শরিক দলের সংখ্যা এখন ১২টি। এর মধ্যে চারটি দলের ইসির নিবন্ধন নেই। বাকি আটটি দল এরই মধ্যে ইসির সংলাপে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, সাম্যবাদী দল ও তরীকত ফেডারেশন নির্বাচনকালীন সরকারে পরিবর্তন চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। জাতীয় পার্টি (জেপি) ও ন্যাপ (মোজাফ্ফর) সংলাপে অংশ না নিলেও ইসির কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। বাকি দুই দল জাসদ (ইনু) এবং গণতন্ত্রী পার্টি সংলাপে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে অভিন্ন অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে।
জোটের শরিক হয়েও ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়ার বিষয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ূয়া সমকালকে বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এরই মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ক্ষমতার ভেতরে ও বাইরে যাঁরা আছেন, সবাই সুষ্ঠু নির্বাচন চান। তাদের দল থেকে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে সংবিধান ও আইন সংশোধন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইন তো মানুষের জন্য। প্রয়োজন হলে পরিবর্তন করতে হবে। তিনি বলেন, তাঁর দলের এই প্রস্তাব ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকেও উত্থাপন করা হবে। গত দুই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আর এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আওয়ামী লীগ বিদ্যমান ব্যবস্থায় ভোট করতে চাইতে পারে। কিন্তু দেখতে হবে, সে অবস্থা এখন আছে কিনা। মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ চায়। ১৪ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছিল মানুষের ভোটাধিকার আদায়ের জন্য। সেটাই যদি না থাকে, তাহলে রাজনীতি করে কী লাভ! অপর এক প্রশ্নের জবাবে দিলীপ বড়ূয়া বলেন, কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও সমঝোতার মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে তাঁর দল।
আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চায় জাপা: অন্যদিকে আগের দুই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতার নির্বাচন করলেও জাতীয় পার্টির এবারের অবস্থান কিছুটা ভিন্ন বলে তাঁরা দাবি করছেন। সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে থাকা জাপা ইভিএম চায় না। জাপার একটি সূত্র জানিয়েছে, তাদের দাবি, দলীয় ভোটের আনুপাতিক হারে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বের বিধান চালু করতে। এর পাশাপাশি আজকে তাঁরা আরও দুটি বিষয় ইসির কাছে উত্থাপন করবেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রয়েছে- সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার তিন বছরের মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধানের সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়াদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের বিধান চালু করা। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সেবা খাত এবং ক্রেডিট কার্ডের খেলাপিদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পরও এগুলো পরিশোধের সুযোগ রাখা।
আজকের সংলাপের বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল সন্ধ্যায় সমকালের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, জাতীয় পার্টি কখনোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারে বিশ্বাসী ছিল না। শুরু থেকেই জাপা এই মতের বিরুদ্ধে ছিল, আজ জাপার অবস্থানের যৌক্তিকতা প্রমাণ হয়েছে।
সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই নির্বাচন সুষ্ঠু করা সম্ভব নয়- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় কোন সরকার থাকবে, সেটা ইসির বিষয় নয়। তাই জাপা এ বিষয়ে ইসির কাছে কোনো প্রস্তাব দিতে চায় না। নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারের মধ্যে যেসব ইস্যু রয়েছে, তা নিয়েই তাঁরা কথা বলতে চান।