নড়াইলের লোহাগড়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, দোকানপাট ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমরা যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনই বিস্মিত। উদ্বেগের কারণ এই- সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এ ধরনের হামলার অঘটন বেড়েই চলেছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পুনঃপুন হুঁশিয়ারি এবং ক্ষেত্রবিশেষ গ্রেপ্তার ও মামলা সত্ত্বেও হামলার ঘটনা থামছে না। উদ্বেগের কারণ এটাও; সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলাগুলোর ধরন ও কারণ প্রায় অভিন্ন। শুরুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো একটি পোস্টের কারণে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয় এবং তা ছড়িয়ে দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়। যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু যে ব্যক্তির সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট নিয়ে উত্তেজনা, তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে দক্ষই নন। আর এটা বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই যে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কোনো সদস্য সংখ্যাগুরুর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার সাহসই পাবে না। এ ব্যাপারে আমাদের সন্দেহ সামান্য যে, গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এভাবে সংঘবদ্ধ সহিংসতা চলে থাকে।
আমাদের বিস্ময়ের কারণ এই- সর্বশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে নড়াইলের মতো এলাকায়। আমরা জানি, দেশের যে কয়টি অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিত্তি যথেষ্ট শক্তিশালী; এই এলাকা তার অন্যতম। উদারপন্থি ও প্রগতিশীল রাজনীতির পীঠস্থান বলেও পরিচিত নড়াইল। বিশেষত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এখানে রয়েছে ব্যাপক গণভিত্তি। তার পরও সেখানে তুচ্ছ অভিযোগে গুরুতর এই সাম্প্রদায়িকতার অঘটন ঘটল কেন! আমাদের প্রশ্ন- নড়াইলের জনপ্রতিনিধি, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করেছে। স্বীকার করতে হবে, নড়াইলে প্রশাসনের পক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। লোহাগড়া এলাকার সংসদ সদস্য এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ফেসবুকে নিজের বেদনা ও বিস্ময়ের কথা ভাগাভাগি করেছেন। কিন্তু আগের অঘটনগুলোর মতো নড়াইলেও 'রোগী মরে যাওয়ার পর ডাক্তার এসেছেন।'