নাগরিক জাগরণের এক নতুন ইতিহাস তৈরি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। সাধারণত মনে করা হয় যে উপযুক্ত বিকল্প নেতৃত্ব দৃশ্যমান না হলে কোনো দেশে সরকারের বিরুদ্ধে গণবিপ্লব সংঘটিত হয় না। এই যে গত ৯ জুলাই শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে পড়লো বিক্ষুব্ধ মানুষ, পালিয়ে গেলেন পরাক্রমশালী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজপক্ষে – এর পেছনে কিন্তু কোনো নেতা নেই।
সাধারণ মানুষই ইতিহাস তৈরি করেন। শ্রীলঙ্কায় যে এক দারুণ ব্যতিক্রমী ইতিহাস লেখা হলো তার সবটুকু কৃতিত্ব সে দেশের সাধারণ মানুষের। প্রেসিডেন্টকে তার বিলাসবহুল প্রাসাদ থেকে বিতাড়িত করে, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন আগুনে পুড়িয়ে তাদের কাছ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা আদায় করে গণবিক্ষোভের প্রাথমিক বিজয় অর্জিত হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
এখন প্রশ্ন সামনে এসেছে, এরপর কি? কিছু বিক্ষুব্ধ নাগরিক প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের দখল নিলে, সেখানে বিলাসী বিছানায় শুয়ে আরামে ঘুম দিলে, সোফায় শরীর ছড়িয়ে দিলে কিংবা সুইমিংপুলে গা বিছালে বা জিমে একটু শরীর চর্চা করলেই কি শ্রীলঙ্কার সংকট দূর হবে? শ্রীলঙ্কাবাসীর ঘরে ঘরে রান্নার জ্বালানি নেই, বিদ্যুতের অভাবে অফিস-আদালত চলছে না, ওষুধ নেই হাসপাতালে, স্কুল–কলেজ বন্ধ, ডলারের অভাবে পণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না।
অর্থাৎ এক সর্বগ্রাসী অভাব কুরে কুরে খাচ্ছে বলেই মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়েছে। ক্ষমতাসীনরা এই অভাব দূর করতে পারেননি বলেই তাদের ওপর মানুষের এই আক্রোশ। প্রশ্ন হলো প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ে রাজপক্ষে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পদত্যাগ করলেই কি শ্রীলঙ্কার অভাব দূর হবে, সংকটের সমাধান হবে?
শ্রীলঙ্কার এখন প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য, ডলার, জ্বালানি এবং খাদ্য। কে দেবে দেশটিকে উদার হাতে বিপুল সহায়তা? কার ভান্ডারে আছে এত সাহায্য সামগ্রী? কিছু অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে চীন অর্থঋণ দিয়ে শ্রীলঙ্কার সর্বনাশের কিছু কারণ হয়েছে। চীনের সম্পদেরও অভাব নেই। ইচ্ছে করলে শ্রীলঙ্কার সংকট মোকাবিলায় চীন পাশে দাঁড়াতে পারতো। কিন্তু চীন বিপদে কারও পাশে দাঁড়িয়েছে এমন নজির খুবই কম।