লেখার মতো একাধিক বিষয় আছে। একবার ভেবেছিলাম, পদ্মা সেতু উদ্বোধন-পরবর্তী উন্মাদনা নিয়ে কিছু লিখি। আবার মনে হলো, না, শিক্ষকদের হেনস্তা করা নিয়ে কড়া ভাষায় লেখাই উত্তম হবে। লিখতে বসে মনে হলো, আরে শিক্ষা তো আমার ক্ষেত্র নয়। শিক্ষার সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরাই লিখুন শিক্ষার বেহাল অবস্থা নিয়ে। তাহলে আমি কী লিখি? সংসদের বাজেট অধিবেশন কেবলই শেষ হয়েছে। একবার সংসদ অধিবেশনে ঢুঁ মেরে আসলে মন্দ হয় না। সংসদ নিয়ে লেখারও সমস্যা আছে। সংসদে তো আর এক দল নেই। কয়েকটি দলের প্রতিনিধিত্ব আছে। আওয়ামী লীগের একক আধিপত্য থাকলেও বিএনপির হাতে গোনা কয়েকজন সদস্য হলেও এবং তাঁরা কম সময় পেলেও যা বলেন তাতে কম ঝাঁজ থাকে না; বিশেষ করে হারুনুর রশিদ ও রুমিন ফারহানা তো মুখ খুললে যেন কথার তুবড়ি ছোটান। সংসদে বিরোধী দল হলো জাতীয় পার্টি। কিন্তু তারা সরকারের সঙ্গে সমঝোতার নীতি থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বেরিয়ে না আসায় অনেক কিছু বলতে চেয়েও না বলাই থাকে বেশি। তারপরও সংসদ একেবারে ঢিমেতালে চলছে না। মাঝেমধ্যেই কারও না কারও কণ্ঠে ঘুমভাঙানিয়া গান যে শোনা যায় তা-ই বা কম কি!
সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন কিছু সময়ের জন্য অধিবেশন কক্ষে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছিল। নির্বাচন কমিশনের জন্য বাজেট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনার সময় ওই বরাদ্দ না দেওয়ার দাবি জানিয়ে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, গত ১০ বছরে নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এখন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন করে না। নির্বাচন করে প্রশাসন। তাই বরাদ্দ বাড়ালে বাড়াতে হবে পুলিশের, প্রশাসনের।
বিএনপির এমপিরা এটাও বলেছেন যে সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে কোনোভাবেই সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। তাঁরা বলেছেন, একসময় আওয়ামী লীগ বলত, আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। এখন বিএনপিকে ছাড়া কি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে? হবে না।
বিএনপি ছাড়া নির্বাচনের প্রশ্ন কেন আসছে? কারণ, বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে, তারা বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। এর মধ্যে নির্বাচনে বড় প্রভাব রাখা দল মূলত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতের কিছু ভোটব্যাংক থাকলেও জামায়াত এখন আর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয়। সে জন্য এটা বলা হয় যে নির্বাচনে ৩৬টি দল অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি যদি নির্বাচন থেকে বাইরে থাকে, তাহলেও আমাদের দেশে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা হবে না। আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিকে বাইরে রেখে ভোট হলে তাকে সুষ্ঠুও বলা হবে না। কিন্তু এই দুই দলের পারস্পরিক সম্পর্ক এখন এমন যে তাদের একমত হয়ে কিছু করা কঠিন। বিএনপি চায় একটি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে (একসময় যেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল) নির্বাচন। কিন্তু বিএনপির এই চাওয়া নাকচ করে দিয়ে সংসদে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘এই সংসদে দাঁড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের এই রায়ের এক সুতাও বাইরে সরকার যাবে না। কারণ বর্তমান সরকার আইনে বিশ্বাস করে। আইনের শাসনে বিশ্বাস করে।’