স্যালমোনেলা টাইফি (এস টাইফি) ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে টাইফয়েডে আক্রান্ত হয় মানুষ। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, বমি বমি ভাব, ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ। প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে এ রোগ। টাইফয়েড জ্বর নিরাময়ে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের ব্যবস্থাপত্র দেন চিকিৎসকরা। তবে টাইফয়েডের এ ব্যাকটেরিয়া এখন অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী স্ট্রেইন বা ধরন তৈরি করছে। এরই মধ্যে স্ট্রেইনটি ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে। বাংলাদেশেও টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী স্ট্রেইন দেখা যাচ্ছে। এটি বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন রোগতত্ত্ব ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
‘দি ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ইন্টারকন্টিনেন্টাল স্প্রেড অ্যান্ড এক্সপ্যানশন অব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স স্যালমোনেলা টাইফি: অ্যা জিনোমিক এপিডেমিওলজি স্টাডি’ শীর্ষক এক গবেষণায় টাইফয়েডের ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি ল্যানসেট মাইক্রোব সাময়িকীতে গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষণায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে টাইফয়েড জ্বরের প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাইফি স্ট্রেইন নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়। এর সঙ্গে আগেই জিনোম সিকোয়েন্স করা চার হাজারের বেশি নমুনা পর্যালোচনার জন্য যুক্ত করা হয়। এর ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, নমুনায় ফ্লুরোকুইনোলন প্রতিরোধী, বহু ওষুধ প্রতিরোধী (এমডিআর) ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি রয়েছে। গবেষণায় বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস, ভারত, পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যের ২৮ জন গবেষক অংশ নেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ১ কোটি ১০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এটি সাধারণত দূষিত খাবার বা পানির মাধ্যমে ছড়ায়। টাইফয়েডে আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে জীবাণু পানিতে মিশে অন্যদের সংক্রমিত করে। দীর্ঘস্থায়ী জ্বর, বমি বমি ভাব, ফুসকুড়ি, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া এ রোগের প্রধান লক্ষণ, তবে কখনো কখনো কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়। টাইফয়েড জ্বর অ্যান্টিবায়োটিকের মাধ্যমে চিকিৎসার পরামর্শ দেয়া হলেও বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ব্যবহার বর্তমানে চিকিৎসাকে করে তুলছে জটিল।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে করা গবেষণায় ওষুধ প্রতিরোধী টাইফয়েডকে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এতে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানের সাড়ে তিন হাজার নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। তাছাড়া এতে ১৯০৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৭০টিরও বেশি দেশ থেকে নেয়া চার হাজারের বেশি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের ফলাফলও বিশ্লেষণ করা হয়। চারটি দেশের জনসংখ্যাভিত্তিক টাইফয়েড জ্বরকে পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি গবেষণায় গত তিন দশকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধী এস টাইফির উত্থান ও ভৌগোলিক বিস্তার পর্যালোচনা করা হয়।