আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারবিরোধী বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গঠন নিয়ে সমমনা দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। বিশেষ করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে 'চাপে' রেখে রাজনৈতিক 'সুবিধা' নেওয়ার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সাত দল। বিএনপির 'বৃহত্তর ঐক্য জোট' গঠনের উদ্যোগের মধ্যেই বৃহস্পতিবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে নতুন কর্মকৌশল গ্রহণ করছে তারা। অতীতের জোট রাজনীতির অভিজ্ঞতার আলোকে অবহেলিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে দলগুলো। একই সঙ্গে রাজনীতির গুণগত মান উন্নয়নের ব্যাপারেও একমত হয়ে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলছেন।
অবশ্য দলগুলোর এ উদ্যোগে বৃহত্তর ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে না বলে মনে করে বিএনপি। দলটি বলছে, বিএনপির লক্ষ্যের সঙ্গে তাদের লক্ষ্য মিল আছে। কাজেই নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ গঠনে বৃহত্তর ঐক্যের উদ্যোগে কোনো বাধা হবে না। ঈদের পর দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় সব বিষয় পরিস্কার হবে বলে আশা করছে তারা। তবে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ভিন্ন কৌশলে এগোচ্ছে। বৃহত্তর ঐক্য হলেও আপাতত যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি পালনের পথেই হাঁটছে বিএনপি। ২০ দলীয় জোটের শরিক, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক এবং নতুন জাতীয় বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হলেও স্ব স্ব ব্যানারেই ইস্যুভিত্তিক যুগপৎ কর্মসূচি পালন বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সমকালকে বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলনে রয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। এতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন আরও বেগবান হবে। সবার লক্ষ্য এক হলে অন্য কোনো বিষয় বড় সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার ব্যাপারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সাত দলের নতুন রাজনৈতিক মঞ্চ হলেও বৃহত্তর ঐক্য ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দল ও মত ঐক্যবদ্ধ হয়ে বর্তমান সরকারের পতন ঘটানো হবে। এরপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। বিজয়ী হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে ভূমিকা রাখা সব দলের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবেন তারা।
সাত দলের কয়েকজন জানিয়েছেন, বিএনপি এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। দেশের বর্তমান যে নাজুক অবস্থা, তাতে গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা বসে থাকতে পারেন না। বর্তমান সরকারের পতন ঘটিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছেন তারা। অতীতে ছোট দলগুলোর সঙ্গে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর বৈরী আচরণের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। এ প্রেক্ষাপটে তারা আগাম জোটবদ্ধ হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। অবশ্য ওই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটি তিন মাস হতে পারে, আবার এক-দুই বছরও হতে পারে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার পরই কেবল নির্বাচন করতে হবে।