রাতের শহর দুবাই। সন্ধ্যা নামলেই শহরটির পাবলিক পার্ক কিংবা খোলা জায়গায় বাড়ে মানুষের ভিড়। সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত; এমনকি ভোর পর্যন্ত পার্কে বসেই চলে আড্ডা। মতিনা পার্ক, ইউনিয়ন মেট্রো সংলগ্ন পার্ক, ক্রিক নদীর পাড়ে তারা জমায়েত হন। ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের চেয়ে এসব স্থানে বাংলাদেশির ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। শুয়ে-বসে তারা সময় কাটান। দূর থেকে দেখলে মনে হবে তারা রাজ্যের সব সুখ নিয়ে জীবনযাপন করছেন। কাছে গেলেই শোনা যায় তাদের ভিন্ন গল্প। অধিকাংশই ভ্রমণ ভিসায় দুবাইয়ে এসেছেন। রুম ভাড়ার টাকা না থাকায় পাবলিক পার্কে সময় কাটাতে হচ্ছে। কেউ কেউ ১২ ঘণ্টা সময়ের ব্যবধানে 'বেড শেয়ার' করায় নিজের সময় আসা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। দালালের খপ্পরে পড়া এসব বাংলাদেশির কেউ কেউ আবার খোলা আকাশের নিচে শুয়েই ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ যেন এক অনিশ্চয়তার জীবন!
শরীয়তপুরের তানভীর ইসলাম এক মাসের ভ্রমণ ভিসায় আসেন সংযুক্ত আরব আমিরাত। ভিসা পেতে তাকে দালালকে দিতে হয় তিন লাখ টাকা। কথা ছিল- দেশটিতে পা রাখলে দ্রুত 'ওয়ার্ক পারমিট' বা কাজের ভিসা পাবেন। কিন্তু দুবাই আসার পর এক বছরেও মেলেনি কাজের ভিসা। শেষ হয়ে গেছে ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ। মাথার ওপর এখন মোটা অঙ্কের জরিমানা নিয়ে ঘুরছেন শারজাহ প্রবাসী এই তরুণ। তানভীরের মতো সিলেটের বিয়ানীবাজারের জাহেদ বিন মাহমুদ চার মাস হলো ভ্রমণ ভিসায় এসেছেন। ভিসা বাবদ তিনিও তিন লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। কাজের জন্য ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়ে যায় তার ভিসার মেয়াদ। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন তারও জরিমানা বাড়ছে। আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ শেষ হলে প্রথম দিন পাঁচ হাজার এবং এরপর প্রতিদিন দুই হাজার পাঁচশ টাকা করে জরিমানা হতে থাকে। সেই হিসাবে প্রতিদিন বাড়ছে তাদের জরিমানার পরিমাণ।
প্রবাসীরা বলছেন, ভ্রমণ ভিসাধারীরা কর্মসংস্থানের জন্য দুবাইকে কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ব্যবহার করছেন। ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ভ্রমণ ভিসা তারা কিনছেন প্রায় তিন লাখ টাকায়। দালালের মাধ্যমে পাওয়া এই ভিসা নিয়ে কেউ কাজের খোঁজ করছেন, কেউ ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি দিতে করছেন নানা তদবির-চেষ্টা। তবে অধিকাংশের অভিযোগ, তারা প্রতারণার শিকার। কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখালেও পরে দালালরা দেশটিতে এনে তাদের ছেড়ে দেয়। মাসখানেকের জন্য কাজ পেলেও ভ্রমণ ভিসার মেয়াদ চলে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মস্থল থেকে তাদের বের করে দেয়। একদিকে কর্মহীন হয়ে পড়া, অন্যদিকে জরিমানার পরিমাণ বাড়তে থাকায় অসহায় পড়ে পড়েন এসব প্রবাসী।