‘ম্যান বিহাইন্ড দ্য মেশিন’ বলে একটা কথা আছে যা কেউই অস্বীকার করতে পারে না। রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে যে কোন সংগঠন, এমনকি একটি পরিবার চালানোর গুনমান মূলত নির্ভর করে তা যারা পরিচালনা করছে তাদের উপর। তাদের দক্ষতা, সততা আর আন্তরিকতার উপরই নির্ভর করবে অগ্রগতি কিংবা অবনতি। এটি যে কোন কোম্পানির জন্য আরো বেশী সত্য। কোন কোম্পানি কোন এক সময় কেউ না কেউ গঠন করেছিলেন যাদেরকে উদ্যোক্তা বলে চিহ্নিত করা হয়। সেই উদ্যোক্তারা মানুষ হিসাবে কেমন, তাদের মানসিকতা, সততা, একাগ্রতা, কর্মনিষ্ঠার মান কেমন সে বিষয়গুলোই মূলত ঠিক করে দেয় সে কোম্পানি সময়ের বিবর্তনে সামনে এগিয়ে যাবে, না ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে।
এটা সত্য যে পাবলিকলি লিস্টেড সব কোম্পানিকে নানা ধরনের শর্তাদি বাধ্যতামূলকভাবে প্রতিপালন করতে হয়। তার মধ্যে আছে নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদন (বার্ষিক, অর্ধবার্ষিক ও ত্রৈমাসিক) প্রকাশ করা। সেখানে কোম্পানির ব্যবসার নানা তথ্য যেমন, সেলস, যাবতীয় খরচ, লাভ-লোকসান ইত্যাদির উল্লেখ থাকে। কিন্ত যাদের কর্মকান্ডের ভিত্তিতে সেসব তথ্যের আকার প্রকার নির্ভর করে, যাদের দক্ষতা বা অদক্ষতা, সততা কিংবা অসততার উপর ভর করে কোম্পানির ভাল-মন্দ ফলাফলের চিত্র ফুটে উঠে সেসব লোকদের নিজের ছবি কতটুকু ফুটে ওঠে সেখানে? সম্ভবত খুব একটা ফোটে না। কোম্পানি পরিচালক আর এমপ্লয়িদেরকে সম্মিলিতভাবে বলা যেতে পারে ম্যানেজমেন্ট টিম। অধিকাংশ কোম্পানির বার্ষিক প্রতিবেদনে পরিচালকদের সাধারণ পরিচিতি সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হয়ে থাকে।
কিন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেখানে তাদের সম্বন্ধে ভালো ভালো কথাই লেখা হয় বা বাড়িয়ে বলা হয়, যাকে বলে ‘sugar coated’। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ম্যানেজিং ডিরেক্টর কিংবা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) এর সহায়তায় দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যাদের নিয়োজিত করলো তা কি ক্রাইটেরিয়া অবলম্বন করে করলো, সঠিক লোক বাছাই করে সঠিক জায়গায় তাদের বসিয়ে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলো কিনা সেসব ছোট ছোট বিষয়গুলোই দিনশেষে নির্ধারণ করে দেয় কোম্পানির আর্থিক ফলাফল। দুঃখজনকভাবে বলতে হয় যে, আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে টপ ম্যানেজমেন্ট, যারা মূলত দৈনন্দিনভাবে সকল কার্যক্রম চালায়, তাদের ট্রাক রেকর্ড জানার ব্যবস্থা থাকে না।