আয় কম, বাড়ছিল ব্যয়। এর মধ্যেই আবার করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বাড়তি খরচের চাপ। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের শেষ প্রান্তিক বা তিন মাসের আয়ের অবস্থা নাজুক, আবার আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরে যে ভালো কিছু দেখা যাচ্ছে, তাও নয়। ফলে নতুন অর্থবছরটি হতে যাচ্ছে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের। আর তা মোকাবিলায় ঋণের ওপর বেশি ভরসা করেই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে নতুন বাজেট দিতে হচ্ছে।
ঋণনির্ভরতা থেকে মুক্তির উপায়ও আপাতত নেই। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দিয়েছেন যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা এবং আগামী অর্থবছরের মূল লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবসম্মত নয়। চলতি অর্থবছরে আদায় হতে পারে বড়জোর ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। কোভিডের কারণে দরিদ্রদের খাদ্যসহায়তা, অতি দরিদ্রদের নগদ সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুদ সুবিধা দিতে হচ্ছে সরকারকে। ১ লাখ কোটি টাকার ছোট-বড় ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজ মূলত ব্যাংক খাতের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হলেও সরকারকে ভালো একটি অংশ বহন করতে হবে। আগামী অর্থবছরেও এগুলো দিয়ে যেতে হবে।
এই টানাপোড়েন নিয়েই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর দ্বিতীয় বাজেটটি উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। যোগাযোগ করলে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট বাস্তবায়ন সব সময়ই চ্যালেঞ্জের এবং সব দেশের সব সরকারকেই এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। নতুন অর্থবছরের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জায়গা থেকেই অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে দেশি-বিদেশি ঋণ নিতে চাইছেন অনেক বেশি। আর সব মিলিয়ে অর্থমন্ত্রী ১১ জুন জাতীয় সংসদে শেষ পর্যন্ত ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকার বাজেট দিতে যাচ্ছেন। চলতি অর্থবছরের বাজেট ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, নতুন অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ, আর গড় মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। আয় বেশি বাড়ছে না চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে ৩ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা আয় ধরা হয়েছিল। আগামী বাজেটে ৭ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরকে বলা হচ্ছে মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আয়কর ও আমদানি শুল্ক মিলিয়ে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য। বাকি ৫৯ হাজার কোটি টাকার ৪০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য কর-বহির্ভূত আয় থেকে। ১৯ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে এনবিআর–বহির্ভূত রাজস্ব আয় থেকে ও বাকি ৫ হাজার কোটি টাকা অনুদান পাওয়া যাবে বলে সরকার মনে করছে।