নূরজাহান কাঁকন বিবি
নারী মুক্তিযোদ্ধা
নূরজাহান কাঁকন বিবি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এক বীরযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা ও গুপ্তচর। তিনি কাঁকন বিবি নামেই অধিক পরিচিত। ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের এক গ্রামে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাঁকন বিবি।
১৯৭০ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শহীদ আলীর সাথে তার বিয়ের পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নূরজাহান বেগম। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়া নিয়ে শহীদ আলীর সাথে মনোমালিন্য থেকে মৌখিকভাবে ছাড়াছাড়ি হয় কাঁকন বিবির।
একই বছরের এপ্রিল মাসে কাঁকন বিবির সাথে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের বিয়ে হয়। ১৯৭১ সালের জুন মাসে পাকিস্তানী বাহিনীর কাছে প্রথম ধরা পড়েন কাঁকন বিবি। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন তাকে অমানুষিকভাবে নির্যাতন করা হয়।
পাকিস্তানী বাহিনীর কাছ থেকে ছাড়া পাবার পর জুলাই মাসে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে দেখা করেন কাঁকন বিবি। এর পর মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর হয়ে পাকিস্তানীদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্যসংগ্রহ করেন। তার সংগৃহীত তথ্যের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক সফল আক্রমণ চালান।
কাঁকন বিবি গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়ে দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন। পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকারদের টানা সাত দিনের অমানুষিক নির্যাতনের এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি। কাঁকন বিবিকে মৃত ভেবে পাক বাহিনী ফেলে রেখে যায়।
পরে তাকে উদ্ধার করে বালাট সাবসেক্টরে নিয়ে আসা হয়। সুস্থ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন কাঁকন বিবি। এর পর গুপ্তচরের পাশাপাশি সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেনে তিনি। কাঁকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে প্রায় দুই যুগ সবার চোখের অন্তরালে ছিলেন কাঁকন বিবি। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সাংবাদিকের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন তিনি। সে সময় তার মেয়ে সখিনাকে নিয়ে ঝিরাগাঁও গ্রামে এক ব্যক্তির কুঁড়েঘরের বারান্দায় বসবাস করতেন কাঁকন বিবি।
১৯৯৬ সালে কাঁকন বিবিকে বীরপ্রতীক উপাধীতে ভূষিত করেন বাংলাদেশ সরকার। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এক একর খাস জমি প্রদান করেন। ২০১৮ সালের ২১ মার্চ রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই বীরপ্রতীকের মৃত্যু হয়।
Join Priyo to discover more contents
আরো কন্টেন্ট দেখতে প্রিয়তে যোগ দিন