শীতের সময়ে পৌষ মাসে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী প্রাঙ্গণে আয়োজিত হয় পৌষমেলা। এই মেলার আকর্ষণে মানুষ ছুটে যান শান্তিনিকেতনে। মেলা উপলক্ষে বসে বিকিকিনির হাট। চলে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন। মেলা কিছুদিন আগে তিনদিন ধরে চললেও ২০১৭ থেকে এটি ছয়দিন ধরে চলে আসছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই পৌষ ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষিত হওয়ার দিনটিতেই এই পৌষমেলার আয়োজন করা হয়। একেবারে শুরুতে ঘরোয়াভাবে এই পৌষমেলার আয়োজন করা হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এর ব্যাপ্তি বেড়েছে। অবশ্য এই পৌষমেলা নিয়ে দূষণ বিতর্কে জেরবার হতে হয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে। আর তাই এবার থেকে বিশ্বভারতী আর পৌষমেলার আয়োজন করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পৌষমেলা আয়োজন করতে গিয়ে প্রবল দূষণের শিকার হচ্ছে শান্তিনিকেতন। এমন একাধিক মামলা হয়েছে। এবারও মামলা হওয়ায় বিশ্বভারতীর উপাচার্য আগেভাগে অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করে পৌষমেলার দায়িত্ব থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বভারতী জানিয়েছে, আগামী ১৪২৬ সালের ৭-৯ পৌষ (ডিসেম্বর, ২০১৯) শান্তিনিকেতন পৌষ উৎসবের ঐতিহ্যপূর্ণ কৃত্যাদি (উপাসনা, পরলোকগত আশ্রমিকদের স্মরণ, মহর্ষি স্মারক বক্তৃতা, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন, সমাবর্তন, খ্রিস্টোৎসব ইত্যাদি) যথোচিত মর্যাদায় পালিত হবে। কিন্তু পৌষমেলা পরিচালনার দায়িত্ব এখন থেকে আর বিশ্বভারতীর পক্ষে নির্বাহ করা সম্ভব হবে না। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, পরিবেশ আদালত-সহ দেশের সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের পালনীয় শর্তাবলী পূরণ করে এই বিপুল আয়তনের মেলা পরিচালনা করার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো বিশ্বভারতীর নেই। এ রকম একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তিতে দুঃখপ্রকাশও করেছেন কর্তৃপক্ষ। এদিকে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের পক্ষেও মেলা পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। ২০১৫ সালের পৌষমেলার পরে জাতীয় পরিবেশ আদালতে প্রথম মামলা হয়। দূষণ এড়াতে বিশ্বভারতীর নানা চেষ্টা সত্ত্বেও এ বছর ফের পরিবেশ আদালতে মামলা হয়েছে। সোমবার বিষয়টি নিয়ে উপাচার্য অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রশ্ন ওঠে, কোথাও বলা নেই যে, উৎসবটি বিশ্বভারতীই করবে। শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উল্লেখ রয়েছে। অথচ পৌষমেলার পরে দূষণ নিয়ে একের পর এক মামলায় পক্ষ হয়ে যাচ্ছে বিশ্বভারতী। অথচ পৌষমেলা থেকে যে আয় হয়, তার কোনোটাই বিশ্বভারতীর তহবিলে জমা পড়ে না।