ডিল ফেয়ার। সিলেটের একটি হায় হায় কোম্পানির নাম। ইতিমধ্যে লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। নগরের জিন্দাবাজারে অফিস খুলে চালিয়ে যাচ্ছিল প্রতারণা। প্রতারক আবদুল গণি খান ও হেলাল আহমদ সবুজ নামের দুই ব্যক্তি এই কোম্পানি এ প্রতারণার জাল বিছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। সিলেটের র্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে এ প্রতারণার ফাঁদের রহস্য উন্মোচন করেছেন। গ্রেপ্তার করেছেন ডিল ফেয়ারের সিলেট চ্যাপ্টারের প্রধান হেলাল আহমদ সবুজকে। কিন্তু পালিয়েছে প্রতারক আবদুল গনি খান। সিলেটের ডেসটিনি ও ইউনিপে-টু এর আদলে চালানো হচ্ছিল এ প্রতারণা। র্যাব জানায়- ২শ’ দিনে টাকা দ্বিগুণের লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের টাকা হাতিয়ে নেয়ার একটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পায় র্যাব। তথ্যের ভিত্তিতে গত সোমবার রাত ৮টার দিকে জিন্দাবাজারস্থ ব্লুওয়াটার শপিং সিটির ৭মতলায় র্যাব অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের মূল হোতা হেলালকে আটক করে। আটক হেলাল আহমদ সবুজ গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের লামা মশখেড় গ্রামের মর্তুজ আলীর ছেলে। এদিকে- তাকে আটক করার পর কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। এ প্রতারণার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া জানিয়েছেন- জড়িতদের বিরুদ্ধে ৪২০ ধারায় মামলা করা হয়েছে। গতকাল বিকালে গ্রেপ্তারকৃত সবুজকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ‘ডিল ফেয়ার’ আমেরিকার একটি কোম্পানি। সেই কোম্পানির এজেন্ট দাবি করে সিলেটে আবদুুল গনি খান প্রতারণার দুয়ার খুলে। কিন্তু বাস্তবে ওই কোম্পানির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। কেবলমাত্র কোম্পানির নাম ব্যবহার করে তারা প্রতারণা চালায়। আর তার সঙ্গে যুক্ত হয় হেলাল আহমদ সবুজ। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারে টিক পয়েন্টেই ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি। এই শপিং সিটির ৭ তলায় ডিল ফেয়ারের অফিস খোলেন আবদুল গনি। তবে- অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা ‘আমার বাজার ডটকম’ নামে তিনি দোকান ভাড়া নেন। ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে- অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার নামে ওই দোকান ভাড়া নেয়া হয়েছিল। বাইরে সাইনবোর্ডও ছিল আমার বাজার ডটকমের। কিন্তু আড়ালে ছিল ডিল ফেয়ার। আবদুল গণি খান ও হেলাল আহমদ সবুজ দু’জন এক সময় ডেসটিনির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। আবদুল গণি খান কয়েক বছর আগে সিলেটে এসে দক্ষিণ সুরমায় লজিং থাকতেন। মদন মোহন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন তিনি। ২০০০ সালে সিলেটে উপশহরস্থ জয়-জুলি বাসায় ডেসটিনির কার্যালয়ে হিসাবরক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন। একপর্যায়ে তিনি মার্কেটিং শুরু করেন। ২০১২ সালে ডেসটিনি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তিনিও নানা জায়গায় টিউশনি করে জীবন নির্বাহ করেন। প্রায় ৬ মাস আগে ‘ডিল ফেয়ার’ নামের হায় হায় কোম্পানির ধারণা আসে তার মাথায়। এজন্য নগরীর জিন্দাবাজারস্থ ব্লু-ওয়াটার শপিং সিটির ৭ম তলায় ‘আমার বাজার ডটকম’ নামক প্রতিষ্ঠানের জন্য অফিস কক্ষ নেন গণি। ‘ডিল ফেয়ার’ নামক প্রতিষ্ঠান মাত্র ২শ’ দিনে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়া শুরু করে। সিলেট অঞ্চলে ‘ডিল ফেয়ার’ জন্য কয়েকজন এজেন্টও নিয়োগ করা হয়। এই হায় হায় কোম্পানির হয়ে কাজ করেন সিলেটের সবুর, শাহ্পরাণের সানওয়ার, মোগলাবাজারের হাসান, রাসেল, ওসমানীনগরের স্বপন, শ্রীমঙ্গলের ফারুক হোসেন সুজন, হবিগঞ্জের দুলালসহ বেশ কয়েকজন। সবুজ গ্রেপ্তারের পর তারাও এখন গা ঢাকা দিয়েছে। প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা জানিয়েছেন- ‘ডিল ফেয়ারে’ বিনিয়োগের হিসাব করা হতো মার্কিন ডলারে। বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মার্কিন ডলারের রেটে বাংলাদেশি টাকা নেওয়া হয়। প্রতি মার্কিন ডলারের জন্য ৯২ টাকা করে নেয়া হয়। তবে প্রকৃতপক্ষে প্রতি ডলারের মূল্য বাংলাদেশি টাকায় ৮০-৮৬ টাকা। ‘ডিল ফেয়ারে’ এক হাজার মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলে মাত্র ২শ’ দিন পর দুইহাজার মার্কিন ডলার দেয়ার লোভ দেখানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। গ্রাহকরা জানিয়েছেন- সিলেটে ইতিমধ্যে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। কয়েকদিন ধরে ডিল ফেয়ারে লোকজনের ভিড়ও বেড়েছিল। জিন্দাবাজারের একটি হোটেলে বসবাস করতেন মূল প্রতারক আবদুল গনি। তিনি ওখানে বসেই লোকজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলতেন। কখনো কখনো তার কাছে নিয়ে যাওয়া হতো লোকজনকে। অভিযানের পর ওই হোটেল থেকে পালিয়ে যান আবদুল গণি।