যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লাগাতার তিনবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম ও তৃতীয় দফায় নির্বাচিত হয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন, মার্কিন ইতিহাসে নতুন কোনো ঘটনা না হলেও বিরল নয়। ফৌজদারি মামলায় দণ্ডিত হয়েও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এ জয় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেক হিসাবকেই ভুল প্রমাণ করে দিয়েছে। নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থার জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের যে ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল, বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা গেল না। বেপরোয়া স্বভাব, দুর্নীতি, অপকর্ম ও একাধিক ফৌজদারি মামলায় জড়িত হয়ে ভোটের আগে এক ধরনের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ট্রাম্পের। নির্বাচনে জয়লাভ করতে না পারলে, হয়তো জেলে যেতে হতো তাকে। মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা তো দিতে হতোই। কিন্তু তার এ অনবদ্য প্রত্যাবর্তন সবকিছু কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত বহন করছে বলেই মনে হয়। ৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজ ভোট এবং পপুলার ভোট উভয় ক্ষেত্রেই ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের রানিংমেট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ব্যাপক হারে হারিয়ে দিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প অশ্লীল ভাষায় কথা বলায় অভ্যস্ত। এ বিষয়টি সাধারণ মানুষ কখনো ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। তারপরও এবার তারা ট্রাম্পের এ বিষয়টি গুরুত্ব না দিয়ে তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছেন। নানা বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রিপাবলিকানরা বেশি জোর দিয়েছিল। মূল্যবৃদ্ধি, অভিবাসন সমস্যা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। কমলা হ্যারিসের মূল লক্ষ্য ছিল, স্প্যানিশভাষী ল্যাটিনোজ, আফ্রিকান-আমেরিকান, মহিলা, কলেজশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ যুবসমাজ এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের সমর্থন পাওয়া। কিন্তু শেষ চারটি ক্ষেত্রেই কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। মূল্যবৃদ্ধিতে জর্জরিত যুক্তরাষ্ট্রে এবারের নির্বাচনে অর্থনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। গ্রামীণ ভোটারদের বড় অংশ চিরাচরিতভাবে রিপাবলিকান দলের সমর্থক। শহরের শ্রমিক-কর্মচারী শ্রেণি সাধারণভাবে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দেন। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি এবং আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত অনেক ডেমোক্র্যাট ভোটার ট্রাম্পকে অপছন্দ করলেও এবার শেষ মুহূর্তে তার প্রতি আস্থা রেখেছেন। অনেক ডেমোক্র্যাট সমর্থক আবার বুথমুখো হননি। ‘দোদুল্যমান’ অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটও এবার ট্রাম্পের পক্ষেই গেছে।