বিশেষজ্ঞরা যে ব্যক্তির ভাষাজ্ঞানকে ক্লাস ফাইভ-সিক্সের বাচ্চাদের মতো বলে মন্তব্য করেছেন; যে ব্যক্তির কথাবার্তা, আচার-আচরণ ও ক্ষমতার দাপট বিশ্ববাসীকে রীতিমতো ত্যক্তবিরক্ত করে আসছে; সেই ব্যক্তি প্রবল পরাক্রমশালী হয়ে আবার হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন।
এ খবরে অধিকাংশ জাতিরাষ্ট্র বিচলিত ও উদ্বিগ্ন। কিন্তু কারও কিছু করার নেই। এটিই আজকের বিশ্বের ঘাড়ে চেপে বসা এক অদ্ভুত অসহায়ত্ব।
তো, সেই ব্যক্তি, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য কর্মকাণ্ডকে মাথায় রেখে সারা বিশ্ব যেখানে আগেভাগে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বা তিনি কী কী করতে পারেন বলে তুমুল আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে খোদ ট্রাম্পকে তাঁর নিজের দেশের বহির্মুখী নীতি নিয়ে একেবারেই চিন্তিত বলে মনে হচ্ছে না।
ট্রাম্পের ‘আগে আমেরিকা’ নীতির ঘোষণা বা বিদেশি পণ্যের ওপর ২০০ থেকে ১০০০ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক আরোপের খায়েশ চীনের মতো রপ্তানিকারক দেশগুলোকে চিন্তায় ফেললেও ওসব বুলি আসলে ঘরকুনো মানসিকতার প্রতিফলন।
রক্ষণশীল, কিন্তু বিশ্বমঞ্চের আলোচিত-সমালোচিত রাজনীতিবিদ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন মনে করতেন, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী পররাষ্ট্রনীতি বিশ্ব ও মার্কিনদের জন্য গুরুত্ববহ এবং দুর্বল মার্কিন অভ্যন্তরীণ অবস্থা বিশ্ববাসীর জন্য বিপজ্জনক।
তবে রিয়্যালিটি শোর চরিত্র ট্রাম্প এ ধরনের পররাষ্ট্রবিষয়ক উচ্চমার্গীয় ‘রিয়্যালিটি’র ধার ধারেন বলে মনে হয় না।
বিগত ট্রাম্প আমলে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবসায়িক লেনদেন ও মুনাফার দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্রগুলোকে মূল্যায়ন করেছে।
এ কারণে বিগত ট্রাম্প আমলে কর্মকর্তাদের কূটনৈতিক মিষ্টভাষ্যে মিত্ররা আশ্বস্ত হতে পারেনি। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে তারা তা আরও পারবে না।
পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের মতাদর্শ, কূটনীতি, সামরিক শক্তি, প্রযুক্তিগত দখল এবং অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও লেনদেন এতটাই বিস্তৃত যে বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র একটি বৈশ্বিক দেশ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। কিন্তু ট্রাম্পের বিশ্ববীক্ষা এর সম্পূর্ণ উল্টো।
যেহেতু শিক্ষা, গবেষণা, চাকরি ও বসবাসের সুযোগ নিতে সারা পৃথিবী থেকে মানুষ ওই দেশে যেতে এবং মার্কিন স্বপ্ন বাস্তবায়নে ‘মরিয়া’ হয়ে থাকে; সেহেতু ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী নীতি অনেকের জন্যই হতাশার ও হুমকির।
অভিবাসীদের উদ্যোগ, কর্মস্পৃহা, আমদানিসহ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য যখন মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে, তখন ট্রাম্পের সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী নীতি কীভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রকে আবার মহান’ করবে, তা বোধগম্য নয়।