বাজারের ১০-২০ টাকা বাঁচিয়ে কোটি টাকা জমানোর নিনজা টেকনিক

প্রথম আলো সারফুদ্দিন আহমেদ প্রকাশিত: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২১:১৯

বিরাট সিঁড়ি দিয়ে গট গট করে নায়িকার বাবা জনৈক ‘চৌধুরী সাহেব’ নেমে আসছেন। তাঁর গায়ে একটা চক্কর-বক্কর মার্কা আঁকিবুঁকি করা সিল্কের ড্রেসিং গাউন। কোমরের কাছে গাউনের দুটো ফিতে বিষ-গেরো দিয়ে বাঁধা। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। ঠোঁটের কোনায় কামড়ে ধরে থাকা কালো পাইপ।


শওকত আকবর টাইপের চৌধুরী সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচতলায় দাঁড়িয়ে থাকা নায়ককে ভারী গলায় বললেন, ‘আমার মেয়ের জীবন থেকে সরে দাঁড়াতে বলো কত চাও? পঞ্চাশ হাজার? ষাট হাজার? সত্তর? আশি?’


চৌধুরী সাহেব টেনেটুনে বড়জোর এক লাখে গিয়ে ঠেকলেন। তার বেশি তাঁকে উঠতে হলো না।


তার আগেই মারাত্মক আত্মমর্যাদাবিশিষ্ট নায়ক বিকট চিৎকার করে ‘চৌধুরী সাহেব! টাকা দিয়ে সব কেনা যায়, ভালোবাসা কেনা যায় না’ টাইপের কিছু একটা বলেটলে পরিবেশ গরম করে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।


সত্তর-আশির দশকের বাংলা সিনেমার এই কমন দৃশ্য এখন আর চলে না।


আজকের এই ডিভ্যালুয়েশনের বাজারে কোনো চৌধুরী সাহেব যদি নায়ককে বলেন, ‘কত চাও? পঞ্চাশ? ষাট? সত্তর? আশি?’ —তাহলে দর্শক ধরেই নেবে এই ‘পঞ্চাশ’ মানে ‘পঞ্চাশ হাজার’ না; ওটা হবে ‘পঞ্চাশ কোটি’, নিদেনপক্ষে ‘পঞ্চাশ লাখ’।


কারণ এই বাজারে কারও কারও বাড়ির কাজের লোকও চার শ কোটি টাকার মালিক। এই দেশে এমন লোকও আছে যার ইউরোপে দুই শর বেশি বাড়ি আছে।


কোনো কোনো পিয়নের কয়েক শ কোটি টাকার গাড়ি-বাড়ি আছে। সরকারি অফিসের এমন ড্রাইভারও আছে, যার বাড়ির একটা দরজা বানাতেই খরচ হয়েছে দশ লাখ টাকা।



গত দুই দশকে বিরাট ‘উন্নয়ন’ হয়েছে। লোকের ‘পারচেজ পাওয়ার’ কোথায় উঠেছে আর ‘ডিভ্যালুয়েশন’ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, তা হাতে এবং কলমে বুঝতে হলে রোববার (৪ নভেম্বর) রাতে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৩৩ নম্বর বাড়িতে ঘটে যাওয়া দৃশ্যপটে চোখ রাখতে হবে। মূল গেটের পাশে নামফলকে রোমান হরফে বাড়িটির নাম লেখা— ‘আলহামদুলিল্লাহ’।


সে বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন। যৌথবাহিনীর সদস্যরা সে বাসায় চার ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালান।


তল্লাশি করে পাওয়া যায় নগদ এক কোটি সাড়ে ৯ লাখ টাকা, মার্কিন ডলার ও ইউরোসহ কয়েক ধরনের বিদেশি মুদ্রা, ১১টি আইফোন এবং দামি ব্র্যান্ডের সাতটি ঘড়ি।


ঘটনার ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিডিওতে দেখা গেছে, জব্দ করা টাকার বান্ডিলগুলো যখন সাজিয়ে রাখা হচ্ছিল, তখন আমজাদ সাহেব বলছিলেন, ‘...আমার সারা জীবনে দশ টাকার দুর্নীতি নাই। এগুলো আমার ওয়াইফের সঞ্চয়, আমার মেয়ের সঞ্চয়।’


আমজাদ সাহেবের স্ত্রী ক্রন্দনসিক্ত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘বাজার কইর‍্যা, বাজারের টাকা থিকা দশ টাকা বিশ টাকা জমায়া আমি এই টাকা বানাইছি বাবা।’


জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের কর্তারা আমজাদ সাহেব ও তাঁর স্ত্রীর এই বক্তব্যকে অমূল্য সম্পদ জ্ঞানে কাজে লাগাতে পারতেন।


সঞ্চয়ী জাতি গড়ে তুলতে তাঁরা এই দুজনের সঞ্চয়ের গল্প তাদের প্রচার-প্রচারণার লিফলেট বা ক্যালেন্ডারে উদ্দীপক ভাষ্য হিসেবে ছাপতে পারতেন।


‘বাজারের টাকা থিকা দশ টাকা বিশ টাকা জমায়া কোটিপতি হওয়া নিনজা টেকনিক’ শিরোনামে মোটিভেশনাল বইও লেখা যেত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us