বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বর্তমানে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা তার প্রজনন এবং বসবাসের জন্য নতুন নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ায় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বাড়ার সঙ্গে এডিস মশার বংশবৃদ্ধি এবং ডেঙ্গুর সংক্রমণও বাড়ছে, যদিও জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সরাসরি সম্পর্ক নিয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা যে করোনাভাইরাসের মতো ডেঙ্গু ভাইরাসও পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম।
বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষাকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব তীব্র হয়। বিশেষত বর্ষার সময় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে এডিস মশা দ্রুত প্রজনন করে। রোগীর সংখ্যা বছরে বছরে পরিবর্তিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান শুধু ঢাকার ৭৭টি হাসপাতাল এবং কয়েকটি জেলার হাসপাতালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। বাস্তবতা হচ্ছে, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ছোট-বড় ক্লিনিকে আরো অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে এবং এমন অনেক রোগী আছে, যারা ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে। প্রতিবার ডেঙ্গুর সংক্রমণ একই সময়ে ফিরে আসছে এবং আমরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। এডিস মশা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
নতুন রোগীদের নিয়ে অক্টোবরের প্রথম ২৬ দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২৪ হাজার ৭২৫ জন এবং এই সময়ে মৃত্যু হয়েছে ১০৮ জনের। গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭০৫। সাম্প্রতিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান দেখে বোঝা যাচ্ছে, সঠিক পদক্ষেপ না নিলে সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
ডেঙ্গুর প্রকোপ কম বা বেশি হওয়ার পেছনে জনসাধারণের সচেতনতা, এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে তাদের সহযোগিতা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর যথাযথ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমি উল্লেখ করেছিলাম যে অক্টোবর মাসটি ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে।