চেবল, অলিগার্ক ও উন্নয়ন

দেশ রূপান্তর বদরুল হাসান প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪০

পত্রিকায় দেখলাম কোরিয়ার খাদ্য ও পল্লী বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালক সাং মুন বাইয়ান বলেছেন যে, কৃষি খাতে যন্ত্রের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোরিয়ার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারে। আসলে শুধু কৃষি খাত নয়, কোরিয়া থেকে শিল্পায়নসহ আরও অনেক সেক্টরে এ দেশের অনেক কিছুই শেখার আছে। চেবলদের ((chaebol) কাহিনি দিয়ে সেটা শুরু করা যায়। সে জন্য একটু ঐতিহাসিক পটভূমি জানা দরকার। ১৯১০ সালে কোরিয়া জাপানি সাম্রাজ্যের অংশে পরিণত হয়। এ সময় কোরিয়ায় জাপানি বিনিয়োগে শিল্পায়ন শুরু হলেও সাম্রাজ্যবাদী শোষণব্যবস্থা অব্যাহত থাকে। ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কোরিয়া যখন প্রথম স্বাধীনতা লাভ করে তখন কোরিয়া ছিল একটি অতি দরিদ্র দেশ। এরপর ঠাণ্ডা যুদ্ধের টানাপড়েনে ১৯৪৮ সালে কোরিয়া ভাগ হয়; জন্ম হয় দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তর কোরিয়া নামের দুটি দেশ। উত্তর কোরিয়া চলে যায় সমাজতান্ত্রিক ব্লকে। আর দক্ষিণ কোরিয়া হয়ে পড়ে ধনতান্ত্রিক বিশ্বের মোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লায়েন্ট রাষ্ট্রে। এই সময় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে আবির্ভূত হন সিংম্যান রি। আঙ্কেল শ্যামের প্রিয়পাত্র এই রি ১৯৬০ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়া শাসন করেন। তার শাসনামলে মার্কিন মুল্লুক থেকে যেমন ব্যাপক সাহায্য-সহযোগিতা এসেছে, তেমনি দেশে চলেছে অবাধ লুটপাট ও দুর্নীতি। চরম জন-অসন্তোষ সত্ত্বেও নানা কারসাজি, নিপীড়ন ও জেল-জুলুমের মাধ্যমে তিনি দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকেন।


১৯৬০ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ব্যাপক কারচুপির আশ্রয় নেন। এতে ছাত্র- জনতা ক্ষোভে রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশের গুলিতে মারা যায় শতাধিক মানুষ। ছাত্র-জনতা পরিচালিত এই এপ্রিল বিপ্লবে রি পদত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়ায় পলায়ন করেন। অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জুলাই নির্বাচনে আগের বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ক্ষমতায় আসে। সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতির শাসনের পরিবর্তে সংসদীয়ব্যবস্থা চালু করা হয়। এ সময় স্বাধীনতা পেয়ে বামপন্থি রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সংবাদপত্র ইউনিয়ন, ট্রেড ইউনিয়ন, শিক্ষক সংগঠন প্রভৃতি প্রশাসন পরিশুদ্ধকরণসহ নিজেদের নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন শুরু করে দেয়; ৮ মাসে প্রায় ২,০০০টা বিক্ষোভ মিছিল ও সভা হয়; এ সময় প্রায় ২,০০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের চাপে সরকার দুর্নীতি ও গণতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে ৪০ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে, যার ফলে ২,২০০ জন সরকারি কর্মকর্তা এবং ৪,০০০ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সরকার প্রচণ্ড চাপের মধ্যে পড়ে যায়; পটপরিবর্তনের পর সৃষ্ট উচ্চ জনপ্রত্যাশা পূরণে নতুন সরকার ব্যর্থ হয়। তার ওপর নিজেদের মধ্যে কলহ, অন্তর্দ্বন্দ্ব ও বিভাজনে দেশে এক ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।  



দেশের এই পটভূমিতে সেনাবাহিনী মেজর জেনারেল পার্ক চুং হি-এর নেতৃত্বে ১৯৬১ সালের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করে। এ সময় কোরিয়ার মাথাপিছু জিডিপি ছিল মাত্র ৭২ মার্কিন ডলার। তার ক্ষমতা গ্রহণের লক্ষ্য ছিল দুটি; দুর্নীতি নির্মূল এবং  দারিদ্র্যমুক্তি। পরিশুদ্ধ করার অংশ হিসেব তিনি প্রথমেই রি প্রশাসনের দুর্নীতি, স্বজন-তোষণ নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে জড়িত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অপসারণ করেন। আর ‘অবৈধ মুনাফাখোর’ চেবলদের মধ্য থেকে বড় বড় ৫১ জনকে আটক করেন এবং তাদের সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেন। আর দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা রচনা করেন।


জাপানি ঔপনিবেশিক শাসন ও স্বাধীনতা-উত্তর সিংম্যান রি-এর স্বজন-তোষণ শাসনামলে কোরিয়ায় চেবলগুলোর অভূতপূর্ব উত্থান ঘটে। এই চেবলগুলো আসলে জাপানি যাইবাতসুর কোরীয় সংস্করণ। জাপানে যাইবাতসু নামে পরিবারভিত্তিক পরিচালিত এসব বড় বড় ব্যবসায়ী ‘কংগ্লোমারেট’ নিজেদের স্বার্থে সরকারি নীতি প্রভাবিত করত; আর কোরিয়ায় চেবলগুলো সরকারি নীতি তো প্রভাবিত করতই, সেই সঙ্গে যুক্ত থাকত সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগকৃত অর্থ লুটপাটে এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষের পকেট কাটায়। ফলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সাধারণ মানুষের অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি না হলেও এই চেবলগুলোর ভুঁইফোড় উত্থান ঘটে। এই চেবলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হলো হুন্দাই, এলজি, স্যামসাং প্রভৃতি ‘কংগ্লোমারেট’। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অর্ধেকেরও বেশি তারা নিয়ন্ত্রণ করত।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us