সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আয়োজন চলছে। এজন্য সরকারীভাবে নীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। কোনটা আগে কোনটা পরে সংস্কারের আওতায় আসবে তা নিয়ে নানা মতামত ও পরামর্শ শোনা যাচ্ছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের জন্য সবার আগে দাবি রাখে কোন ক্ষেত্রগুলো তা নিয়ে অনেকটা হিমশিম খাবার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে।
সংস্কারের আগেই বিভিন্ন দাবি পূরণের জন্য দল বেঁধে মাঠে নেমে যাচ্ছে বঞ্চিত মানুষ। ফলে প্রতিদিন সূর্যের আলো ফোটার আগেই নানা সেক্টরে নতুন করে সমস্যার কথা শোনা যাচ্ছে। যেন সবার ভেতরে এত বছর ধরে শুধু সমস্যার পাহাড় জমা হয়েই ছিল। কেউ এতদিন তাদের সমস্যাগুলো মুখফুটে কারো কাছে প্রকাশ করার সুযোগ পায়নি বলে মনে হচ্ছে।
তার মূল কারণ সব সেক্টরে বিভেদের দৌরাত্ম্য এতটাই ফাঁরাক তৈরি করেছিল যে, একটি বঞ্চিত শ্রেণি চরম হতাশ হয়েও তাদের কষ্টের কথা সাহস করে বলতে পারেনি। একটি ইতিবাচক পরিবেশের অভাব ও অজানা ভয় তাদেরকে সবসময় তাড়িয়ে বেড়িয়েছে।
মোটাদাগে, সেই বিভাজনটা চরম আয় বৈষম্যের। কোনো কাজকর্ম না করে শুধু তোষণ-তোয়াজের মাধ্যমে কেউ টাকার পাহাড় গড়েছেন। কেউবা দলীয় লেজুড়বৃত্তি করে নিজের দুর্নীতি, জালিয়াতি ইত্যাদিকে আড়াল করে বিত্তশালী হয়ে উঠেছেন। অপরদিকে অবৈধ মজুতদারী, কালোবাজারী, দ্রব্যমূল্যস্ফীতি ঘটিয়ে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে নিম্নশ্রেণির মানুষকে শোষণের যাঁতাকলে নিষ্পেষণ করেছেন। যার প্রভাব সমাজে এখনও বিদ্যমান রয়েছে।
এর সাথে তাল মিলিয়ে বেড়ে গেছে অবৈধ ‘উপরি কামাই’করার প্রবণতা। বিশেষ করে সরকারী চাকুরীজীবিদের অনেকের মধ্যে অবৈধ উপরি কামাই লিপ্সা এতটাই বেড়ে গেছে যে, তারা নিজেদের দায়িত্ব ভুলে গিয়ে বৈধ বেতনের পাশাপাশি আরো কতিপয় অবৈধ আয়ের পথ সৃষ্টি করে মানুষকে হেনস্তা শুরু করে দিয়েছিল। নিয়োগ, বদলি, প্রমোশন ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা আয়ের গোপন সুড়ঙ্গ তৈরির কথা নতুন করে লিখে বলার অবকাশ নেই।
বিভিন্ন নির্মাণ কাজে কমিশনের নামে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের পরিমাণ অধুনা জাতিকে হতবাক করে তুলেছে। এর পাশাপাশি প্রতিটি সেবা ক্ষেত্রে কর্মচারীদেরকে খুশি করার নামে ঘুস তথা অবৈধ আয়ের আঞ্জাম করে না দিলে কাজ সম্পন্ন করা দুষ্কর হয়ে উঠেছিল। এগুলোই ঘুস-দুর্নীতি বা উপরি আয়ের রুট হিসেবে বিবেচিত।