রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ

যুগান্তর ব্রি. জে. (অব.) হাসান মো. শামসুদ্দীন প্রকাশিত: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:০৭

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে এবং বর্বর হত্যাযজ্ঞ থেকে প্রাণ বাঁচাতে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। নির্মম এ বর্বরতায় বিশ্বমানবতা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর ২০১৮ সাল থেকে ২৫ আগস্ট দিনটিকে রোহিঙ্গারা গণহত্যা দিবস হিসাবে পালন করে আসছে। এদিনে তারা ক্যাম্পের ভেতরে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির চেয়ারম্যান মাস্টার মুহিবুল্লাহর নেতৃত্বে ক্যাম্পে প্রথম বড় ধরনের সমাবেশ হয়। প্রত্যাবাসনবিরোধী মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার সন্ত্রাসীরা পরবর্তীকালে তাকে হত্যা করে। এ বছর ২৫ আগস্ট ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ১৩-১৪টি স্থানে ‘হোপ ইজ হোম’ ক্যাম্পেইন পালন করে রোহিঙ্গারা। তারা মিয়ানমারে টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর কাছে বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি তুলে ধরে। পোস্টার-প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে ২৫ আগস্টকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত করে রোহিঙ্গারা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ও মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার দাবি তুলে ধরে।


আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানায়। রোহিঙ্গারা জানায়, তারা আর বাংলাদেশের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। ‘সেফ জোন’ পেলে তারা এখনই মিয়ানমারে ফিরে যেতে চায়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, চলাচলের স্বাধীনতাসহ নিজ গ্রামে যেতে দিলে তারা নিজেরাই মিয়ানমারে চলে যাবে বলে জানায়। শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ এবং সহিংসতার ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গারা এখনো রাষ্ট্রহীন অবস্থায় আছে। তারা মনে করে, নাগরিকত্ব, জাতিগত পরিচয়, জায়গা-জমি ও গণহত্যার বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে তারা মিয়ানমারে গিয়ে আবারও সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পড়বে।


বাংলাদেশের ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নানা ধরনের উদ্যোগের পরও এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারেনি। কূটনৈতিক ও আইনি প্রক্রিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনার পরও সংকট সমাধানে কোনো অগ্রগতি হয়নি। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নতুন সরকারের সহযোগিতা চায় এবং এদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পক্ষে। তারা বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে তাদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় সহজ হবে।



রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীনের মধ্যস্থতায় গত সাত বছরে নেওয়া তিন দফা উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গারা ২০১৭ সালের আগস্টে এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর নভেম্বরে চীনের মধ্যস্থতায় মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি করে বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এরপর ২০১৯ সালের আগস্টে চীনের উদ্যোগে আরেকটি প্রত্যাবাসনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়, কিন্তু নাগরিকত্বের বিষয়টির সমাধান না হওয়ায় রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় যেতে চায়নি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শাসনক্ষমতা দখল করার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংক্রান্ত আলোচনা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।


২০২৩ সালের এপ্রিলে চীনের তরফ থেকে তৃতীয় দফা উদ্যোগ নেওয়া হয়। চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয় এবং মে মাসে চীনের উদ্যোগে মিয়ানমার প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্যতা যাচাই ও পাইলট প্রকল্প হাতে নেয়। এ উদ্যোগের পর কয়েক দফায় রোহিঙ্গাসহ উভয় দেশের প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্যতা যাচাই করে। মিয়ানমারে ফেরার জন্য নির্বাচিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পগুলোয় একত্রিত করা হয়। কিন্তু আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার জান্তা সরকারের সঙ্গে চলমান যুদ্ধে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া থেমে যায়। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত নয় বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। চলমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বর্তমানে থেমে আছে। রোহিঙ্গা ইস্যুটি এখন দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পরিণত হয়েছে।


রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট মংডু শহর থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার জন্য নাফ নদের তীরে একত্র হয়েছিল। সেখানে তাদের লক্ষ করে ড্রোন বোমা ও গোলা নিক্ষেপ করা হয়। এতে কমপক্ষে ২০০ রোহিঙ্গা নিহত ও ৩০০ জন আহত হয়। এ ঘটনার জন্য আরাকান আর্মিকে দায়ী করা হচ্ছে। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার কথা জানিয়েছেন। ২৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উপস্থাপিত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতিকে ইউএনএইচসিআর স্বাগত জানিয়েছে। রোহিঙ্গা সংকটের সাত বছর পূর্তিতে ইউএনএইচসিআর দাতাদেশ, আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে রোহিঙ্গা কার্যক্রমে তাদের অর্থায়ন বাড়ানোর আহ্বান জানায়। অর্থায়নের অনিশ্চয়তার কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও জীবনরক্ষাকারী কার্যক্রম ছাড়া অন্য অনেক জরুরি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

আরও ৫০০ রোহিঙ্গা পালিয়ে এলো বাংলাদেশে

ঢাকা পোষ্ট | কক্সবাজার জেলা
১ সপ্তাহ, ৪ দিন আগে

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us