পরিবর্তনের সূতিকাগারগুলো সুস্থ রাখতে চার করণীয়

সমকাল মো. মাসুদ পারভেজ রানা প্রকাশিত: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৪

আবারও প্রমাণ হলো– শিক্ষাঙ্গনই পরিবর্তনের সূতিকাগার। শিক্ষার্থীরাই পারে স্বৈরশাসকদের হার মানাতে; স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দিতে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন আমাদের মায়ের ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন আর চব্বিশের ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ প্রমাণ করে, নতুন সমাজ ও রাজনীতি বিনির্মাণে তারাই অগ্রগণ্য। অন্তবর্তী সরকারেও নেতৃস্থানীয় ছাত্র সংগঠক কয়েকজনের অংশগ্রহণ খোদ শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি। 


কারণ স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার্থীরা ছিল বঞ্চিত, নির্যাতিত; বাকস্বাধীনতা হারানো। সরকারে যোগ দেওয়া তরুণরা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এর পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না। এ ছাড়া শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি কীভাবে স্বৈরাচারীদের সহযোগিতা এবং ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে বাধ্য করে, এগুলোও অন্যান্য উপদেষ্টার সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন। একই সঙ্গে সরকারে যোগ দেওয়া তরুণ নেতৃত্ব খুব কাছে থেকে অভিজ্ঞদের দেখার সুযোগ পাবেন– কীভাবে একটি দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনা করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে আসা তাত্ত্বিক জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ করার সুযোগ মিলবে। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ নির্মাণে তাদের সাফল্য তরুণ সমাজের কাছে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। আরও তরুণ মেধাভিত্তিক রাজনৈতিক চর্চায় আগ্রহী হবে এবং শিক্ষা গ্রহণ শেষে রাষ্ট্র ও সমাজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত হবে। পাশাপাশি আরও চারটি বিষয় বিশেষভাবে বিবেচনাযোগ্য।



প্রথমত, দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোয় আবাসিক সিট পাওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি পরিহার করতে পারলে হল প্রশাসন বর্তমানে জারি থাকা নীতিমালার আলোকেই মেধার ভিত্তিতে হলগুলোয় সিট বণ্টন করতে পারে। এ জন্য সদিচ্ছাই যথেষ্ট। অতীতে সব রাজনৈতিক সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রশাসকদের দেখেছি, তাদের সমর্থনপুষ্ট ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ সহায়তায় ব্যাপক সংখ্যক সিট বরাদ্দ দিয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বঞ্চিত করেছে। তাই সিট বণ্টনের ক্ষেত্রে ছাত্র প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা থাকা জরুরি। তবে সেটা অবশ্যই রাজনীতিমুক্ত। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন হলের সিট থেকে বঞ্চিতরা হলে উঠতে অথবা হল দখল করতে চাইবে। কিন্তু এযাবৎকালে বরাদ্দকৃত সিটগুলোকে পুনর্বরাদ্দের মাধ্যমে সবাইকে সুযোগ করে দিতে না পারলে আবারও অসন্তোষের সূচনা হতে পারে।


দ্বিতীয়ত, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কোন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি বা সংযোগের কথা সব ছাত্রছাত্রীর কাছে পরিষ্কার। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান বিষয়টিকে আরও স্পষ্ট করেছে। যৌক্তিক দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বড় অংশ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে আসতে পারেনি এবং অনেকে আসতে সাহসও করেননি। অনেকে আবার সামাজিক মাধ্যমে পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে বাদানুবাদেই থেকেছেন। আন্দোলন চলাকালীন ছাত্রছাত্রীদের নিজ বিভাগের শিক্ষককে অবাঞ্ছিত ঘোষণার মতো ঘটনাও ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে সব শিক্ষকেরই কর্মক্ষেত্রে ফেরত আসতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের ওইসব শিক্ষকের ক্লাসেও অংশগ্রহণ করতে হবে। এ জন্য উচিত সবার মধ্যে সম্পর্কের যে বিচ্ছেদময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার ঊর্ধ্বে উঠে ভবিষ্যতের দিকে মনোনিবেশ করা। 


তৃতীয়ত, শিক্ষক হিসেবে মনে করি, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেশাভিত্তিক সংগঠনের বাইরে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত থাকা উচিত নয়। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা অবশ্যই সবার অধিকার। যদি কেউ সরাসরি রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে চান, তাতে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহিত-সম্মতিক্রমেই হওয়া উচিত। যেমনটি একজন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার জন্য নিয়ে থাকেন। এ কথাও অনস্বীকার্য, শিক্ষকদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, চিন্তা ও দর্শন প্রাথমিকভাবে গবেষণাভিত্তিক এবং সৃষ্টিশীল হওয়াই কাম্য। কোনোভাবেই তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অবস্থান যেন ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থ পরিপন্থি না হয় এবং শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না করে। শিক্ষকদের পরিচয় এবং অবদান তাদের নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতেই হওয়া উচিত। এর ফলে আমাদের তরুণ প্রজন্ম সামগ্রিকভাবে সৃষ্টিশীল ও গবেষণা অনুরাগী এবং মেধা ও মননশীলতা বিকাশে অধ্যয়নে মনোনিবেশ করবে। আমার বিশ্বাস, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি শিক্ষকদের মনে নতুন কিছু ভাবনার উদ্রেক করবে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us