১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে আছে বিএনপি। দলের প্রধান খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছিল এবং বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। দণ্ড মাথায় নিয়ে ছেলে তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিবর্তন এসেছে। এই নতুন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।
আপনি বারবার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা বলছেন, যৌক্তিক সময় বলতে আপনি কত সময় বুঝিয়েছেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: অন্তর্বর্তী সরকার তো অন্তর্বর্তী সরকার। একটি নির্বাচিত সরকার থেকে আরেকটি নির্বাচিত সরকার হতে যে সময় দরকার। এটি কোনো নির্বাচিত সরকার নয়। এটি একটি সিলেক্টেড সরকার।
তাদের প্রধান দায়িত্ব দেশে দীর্ঘকাল ফ্যাসিবাদী সরকারের দুঃশাসনের ফলে যে গণতান্ত্রিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, সেগুলোকে একটি জায়গায় নিয়ে আসা, যে জায়গায় আনতে পারলে দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা সম্ভব। এবারের জন্য সুনির্দিষ্ট সময় বলা মুশকিল, কারণ এবার এত বেশি ড্যামেজ হয়েছে, দীর্ঘকাল প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনি একটি সংস্কারের রোডম্যাপ চেয়েছেন। কোন কোন সংস্কার হলে বিএনপি মনে করবে 'গুড এনাফ?' কোন কোন ক্ষেত্রে আপনারা সংস্কার চান? আপনারা ক্ষমতায় গেলে এই সরকারের সংস্কারগুলো সংসদে পাস করবেন কি?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠানটাই নষ্ট হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী একবারে নষ্ট হয়েছে। বিচার বিভাগ, যেটা রাষ্ট্রের জন্য সবচাইতে জরুরি, সেখানে দলীয়করণ চূড়ান্ত হয়েছে, দুর্বৃত্তায়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা খুব বেশি প্রয়োজন। অর্থনীতিতে বেসিক সমস্যা আছে, যদিও এর তাৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব না। কতগুলো ইমিডিয়েট পদক্ষেপ দরকার যাতে অর্থনীতি সচল থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে আমূল সংস্কার দরকার। সেটা দ্রুত হয়ত সম্ভব না, তবে শুরুটা করা দরকার। প্রধানত যে বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিতে চাই, সেগুলো হলো নির্বাচন ব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা, সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এবং বিচার বিভাগ, এই চারটি বিষয়ে নূন্যতম যে সংস্কার সেটি হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
তবে এই সংস্কারগুলো করার আগে বর্তমান সরকারের উচিত হবে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে, সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা। কথা বলে ধারণাগুলো নেওয়া। এটি করা উচিত এবং এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যদি সংস্কার হয় তাকে অবশ্যই সমর্থন করব আমরা।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ব্যাপারে দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না? কবে নাগাদ তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: তারেক রহমান সাহেবকে তো আমরা দেশে ফিরিয়ে আনতেই চাই। তিনি আমাদের অ্যাক্টিং চেয়ারম্যান। দ্বিতীয়ত উনার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো হয়েছে, আমরা মনে করি এবং বিশ্বাস করি সেগুলোর আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। পুরোপুরি বানোয়াট, প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মামলাগুলো করা হয়েছে। তার ফিরে আসা দেশের জন্য, দলের জন্য খুব প্রয়োজন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে আপনারা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা রয়েছে, আপনার বিরুদ্ধেও ৯৮ মামলা। এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি আছে কি না?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমরা এই মামলাগুলো প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছি। অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা এই কেসগুলোর তালিকা রেডি করে সরকারকে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা বর্তমান লিগ্যাল সিস্টেমে মুভ করছি। অলরেডি আমাদের দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীর জামিন হয়েছে। তবে কেস উইথড্র হয়নি। তবে আমার বিরুদ্ধে যেসব কেসগুলো একেবারেই ফেক, সেগুলো প্রত্যাহার হোক। যত দ্রুত হবে ততই মঙ্গল।
জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের জোট ছিল এবং দীর্ঘদিন আপনারা দলটির সঙ্গে একটা দূরত্ব বজায় রেখেছেন। জামায়াতের সঙ্গে আপনার দলের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে আছে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমাদের যে জোট ছিল, আন্দোলনের জন্য জোট, সেটা অনেক আগেই অকার্যকর হয়ে গেছে। এটা এখন কোনো কাজ করে না। অনেক আগেই আমরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করেছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে প্রোগ্রাম ঠিক করে যুগপৎ আন্দোলন করেছি সরকার পতন অবধি। এটা এখন বলবত নেই। তবে অন্য দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা অব্যাহত রেখেছি, কারণ এখনো কেয়ারটেকার সরকার আছে, এরপর নির্বাচন আছে। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা আলোচনা বজায় রাখছি, এটা জরুরি। এই মুহূর্তে আমাদের কোনো জোট নেই। আমরা জোটবদ্ধ নই।