সংবিধান স্থগিত চাওয়ার উদ্দেশ্য কী সিইসির

প্রথম আলো কামাল আহমেদ প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২৪, ১২:২২

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ও স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে যাওয়ার বিষয়টি এখনো মানতে পারছেন না—এমন কেউ আর নেই বলে মনে করা যে ভুল, তার কিছু প্রমাণ আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পেয়েছি।


তাঁরা শুধু স্বৈরশাসনের মাঠকর্মী বা দলীয় সদস্য নন, তাঁদের কেউ কেউ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানেও আসীন আছেন বলাটা সম্ভবত অন্যায় হবে না। বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থানের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কথা এখানে স্মরণ করা যায়। কিন্তু সেটাই শেষ নয়। না হলে স্বৈরশাসনকে দীর্ঘায়িত করার কাজে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের প্রধান হঠাৎ করে সংবিধান লঙ্ঘনের আওয়াজ তুলতেন না।


প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ২৪ আগস্ট সমকাল–এ এক নিবন্ধে সংবিধান আংশিক অথবা পুরোপুরি স্থগিত রাখার কথা বলেছেন। তিনি অভিযোগের সুরে বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক সংকটে। আলোচনার জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই কমিশনের প্রধান হিসেবে পত্রিকায় লিখে জনগণকে অবহিত করাই সমীচীন মনে করছি।’ তিনি কী আলোচনা করতে চান, তা যতটুকু খোলাসা করেছেন, তা হচ্ছে, ‘বিপ্লবোত্তর এই সময়ে খানিকটা সাংবিধানিক শূন্যতা দৃশ্যমান।’




সাবেক এই আইনসচিব, যিনি বিচার বিভাগেও কাজ করেছেন, তিনি সংবিধান আংশিক বা পুরোপুরি স্থগিত করার পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে বলেছেন, সামরিক অভ্যুত্থান হলে সামরিক ফরমান দ্বারা সংবিধানকে অবিলম্বে রহিত বা স্থগিত করা হয়। স্থগিত করা হলে ফরমানকে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে অগ্রগণ্যতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ফরমান ও স্থগিত— সংবিধানের মধ্যে বিরোধের ক্ষেত্রে ফরমানকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। আইনের শাসনের ধারাবাহিকতাকে এভাবে বজায় রাখা হয়।


এরপর হাবিবুল আউয়াল অর্ন্তবর্তী সরকারকে ‘বিপ্লবী সরকার’ হিসেবে অভিহিত করে তাদের শপথ নেওয়ার কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টারা যে সংবিধানের অধীন শপথ নিয়েছেন, তাতে তিনি বিস্মৃত হয়েছেন কি না জানি না। তবে তিনি লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে আগাম বৈধতা নেওয়া হয়েছে। পরে আপিল বিভাগকেই বিদায় করা হয়েছে।’ আপিল বিভাগের বিদায় যে স্বৈরশাসনকে টিকিয়ে রাখায় উচ্চ আদালতের বিতর্কিত ভূমিকা এবং নতুন সরকারের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় অভ্যুত্থানচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার কারণে ঘটেছে, সে বাস্তবতাকে তিনি উপেক্ষা করেছেন।


যদিও কাজী হাবিবুল আউয়াল লিখেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান কার্যকর করতে আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না’, তবু তাঁর বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি একধরনের শ্লেষ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘গণ-অভ্যুত্থান একটি স্বতঃসিদ্ধ বাস্তবতা (সেলফ এভিডেন্ট)। আইনের ঊর্ধ্বে এর অবস্থান। তবে বিপ্লবোত্তর সময়ে আইনের ঊর্ধ্বে একটি ফরমান অনিবার্যভাবে প্রয়োজন। সামরিক আমলারা তা জানেন। সুশীল আমলারা সেটা বোধ করি জানেন না।’ সুশীল আমলা হিসেবে কাদের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে, তা বুঝতে কোনো পাঠকের কষ্ট হওয়ার কথা নয়।



হাবিবুল আউয়ালের নিবন্ধটি সমকাল–এ যা ছাপা হয়েছে, তার চেয়েও বেশি কিছু তিনি লিখেছেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে। ওই প্রতিবেদনে এমন কিছু বক্তব্য আছে, যা সমকাল–এ ছাপা হয়নি, কিন্তু রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত (বিপ্লবের ইতিহাস মনে করালেন সিইসি, চাইলেন সংবিধান স্থগিতের ফরমান, ২৫ আগস্ট, ২০২৪)।


তিনি বিভিন্ন দেশে বিপ্লব ও প্রতি–বিপ্লবের ইতিহাস থেকে দৃষ্টান্ত টেনে সম্ভাব্য প্রতি–বিপ্লবের ঝুঁকির কথা বলেছেন। আর সেখানেই লিখেছেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে এক সামরিক বিপ্লবে হত্যা করা হলো। নভেম্বরে আবারও সামরিক বিপ্লব এবং পরে অচিরেই সৈনিক-জনতার অংশগ্রহণে এক সফল প্রতি–বিপ্লব।’


৩ নভেম্বরের ব্যর্থ অভ্যুত্থানকে বিপ্লব ও ৭ নভেম্বরের পরিবর্তনকে ‘প্রতি–বিপ্লব’ অভিহিত করার বয়ানটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিভাজনের একটি গুরুতর বিতর্কের উৎস। একপক্ষীয় বয়ান নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তাঁর জবাব কী হবে, সেটা অনুমান করা থেকে বিরত থাকলেও প্রসঙ্গটি উত্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করা আবশ্যক।


কথিত প্রতি–বিপ্লবের ঝুঁকির কথা বলা এবং তার সঙ্গে সাংবিধানিক শূন্যতা বিরাজ করার দাবি মোটেও স্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে তাঁদের নিয়োগ যেখানে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিরোধী দলগুলো ও নাগরিক সমাজ থেকে যখন অনেক আগে থেকেই তাঁদের পদত্যাগের জোরালো দাবি ছিল, তখন তাঁরা গণ–অভ্যুত্থানের পরও পদ আঁকড়ে থাকায় তাঁদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল হতে পারে কাল

প্রথম আলো | নির্বাচন কমিশন কার্যালয়
৬ মাস আগে

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us