শান্তির অন্বেষায়...

আজকের পত্রিকা মামুনুর রশীদ প্রকাশিত: ১৫ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪৫

এক অদ্ভুত আলো-আঁধারির মধ্যে চলছে স্বদেশ। খুব দ্রুতই একটি রাষ্ট্রে এক বড় ধরনের পরিবর্তন হয়ে গেল। ছাত্র আন্দোলন এক অভ্যুত্থানে রূপ নিল। এটি আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের আন্দোলন থেকে এক বিরাট গণ-অভ্যুত্থানের জন্ম নিয়ে রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল। সেখানে যাঁরা রক্ত দিয়েছিলেন, তাঁরা আজও আমাদের কাছে এক মহৎ প্রেরণা। উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে পাকিস্তানি বাহিনী মিছিলের সম্মুখে থাকা অবস্থায় আসাদকে গুলি করে, আসাদের শার্ট লাল হয়ে ওঠে। আসাদ আমাদের চেতনায়, আমাদের কাব্যে স্থান করে নিয়েছেন।


শামসুর রাহমান লিখেছিলেন ‘আসাদের শার্ট’। স্বৈরাচারবিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে নূর হোসেন তাঁর বুক ও পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লিখে স্বেচ্ছায় প্রাণ দিয়ে আন্দোলনের চেহারাটা খুব দ্রুতই পাল্টে দিয়েছিলেন।



সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বুক চিতিয়ে আবু সাঈদের আত্মদান এই অভ্যুত্থানে প্রেরণা এবং প্রতীক হয়ে রইল। ইতিহাসে দেখা গেছে, এই সব আত্মত্যাগী মানুষ একেকটা লড়াইয়ের ঘটনাপ্রবাহকে দ্রুত এগিয়ে দেন। কিউবার মুক্তি আন্দোলনে এক কিশোরের কথা আমরা জানি। সান্তাক্লারা প্রদেশের রেডিও স্টেশনটি দখল করতে গিয়ে সে প্রাণ বিসর্জন দেয়। সেই কিশোরের আত্মত্যাগ লড়াইয়ের গতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলে।


বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি এত দ্রুত গতি পেয়ে গেল যে শাসক দল অভ্যুত্থানের সামনে থেকে সরে গেল। মানুষের ক্রোধ ও সেই সঙ্গে একধরনের লোভ-লালসা নানা ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনল। গণভবন, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবাধ লুটতরাজ করা হলো। একের পর এক ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হলো। ২২টি শিল্পকলা একাডেমি, সেই সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা এবং জাদুঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। টেলিভিশন ভবন, সেতু ভবন, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা, মেট্রোরেলের দুটি স্টেশন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে—এসব আক্রান্ত হলো।


আমাদের বিশ্বাস, ছাত্ররা এসব করেনি। রাজধানীতে ক্ষমতার পালাবদলে লুটতরাজ হয়, এটা আমাদের ইতিহাসেই আছে। দিল্লিতে নাদির শাহের লুণ্ঠন, পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পতনের পর মুর্শিদাবাদ লুণ্ঠন। এসব আমাদের জানা ইতিহাস। একটা সময়ে পার হওয়ার পর ছাত্র-জনতার প্রচেষ্টায় এই লুণ্ঠনকাজ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।



সাম্প্রতিক আন্দোলনে স্বল্প সময়ের মধ্যে এত মানুষের মৃত্যু আমাদের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একদিকে নিষ্ঠুরতা এবং অন্যদিকে তাদের প্রাণহানিও লক্ষ করার মতো। তাই দেখা গেল, পুলিশ বাহিনী সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত হয়ে যায়। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসে এবং স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাজপথে নেমে আসে। অভিজ্ঞতা না থাকলেও কয়েক দিনের মধ্যে দক্ষতার সঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন শুরু করে। অরক্ষিত জনপদে ডাকাতের হামলার খবর পাওয়া যায়। এ সময়ে আবারও ছাত্র-জনতা ও এলাকাবাসী রাত জেগে নিজ নিজ এলাকা পাহারা দিতে থাকে। একটা সময় মনে হলো, আমাদের দেশ আছে, মানুষ আছে কিন্তু রাষ্ট্রটা নেই। রাষ্ট্রের আকাঙ্ক্ষা প্রতিটি মানুষ রেডিও-টেলিভিশনের সংবাদের দিকে নজর রাখতে থাকে এবং আশা করতে থাকে কখন সেনাপ্রধান ভাষণ দেবেন, কখন একটি সরকার গঠন হবে, কে সরকারের প্রধান হয়ে আসবেন।


ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। তিনি রাজি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানুষ অপেক্ষা করত থাকে কখন তিনি দায়িত্ব নেবেন, কখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হবে। সময় যেন কাটতে চায় না। একসময় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পূর্ণাঙ্গ চেহারাটা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মানুষ আশ্বস্ত হয়। তখনো পুলিশ বাহিনী আসেনি। এখন মানুষের আকাঙ্ক্ষা কখন থানা ও সড়কে পুলিশ আসবে। এ দেশের মানুষের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে খুব একটা উচ্চ ধারণা কখনোই জন্মায়নি। তবু দেখা গেল মানুষ পুলিশ চাইছে।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us