স্বৈরাচারের পতন ও নবযুগের সূচনা

যুগান্তর ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী প্রকাশিত: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৭

বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ইতঃপূর্বে ঘটে যাওয়া বহু তাৎপর্যপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও অর্জনের ঘটনাগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, যে কোনো ন্যায়ভিত্তিক যৌক্তিক রাজনৈতিক আন্দোলন সাফল্য অর্জন করেছে, কখনো ব্যর্থ হয়নি। এসব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রকৃতি ও আদর্শগত অবস্থানের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও অবৈধ দখলদারি স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে এগুলো সর্বদাই বিজয় লাভ করেছে। বিশ্বের প্রাচীন ইতিহাসেও স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে বারবার বিদ্রোহ ঘোষিত হয়েছে। কোথাও বিদ্রোহ সফল হয়েছে, কোথাও আবার ব্যর্থ হয়েছে। সাফল্য ও ব্যর্থতার ধারাবাহিকতায় আমরা দেখেছি আধুনিককালে কোনো স্বৈরশাসকই গণঅভ্যুত্থানের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তার মসনদ রক্ষা করতে পারেনি।


সাম্প্রতিককালের প্রসঙ্গ বাদ দিলেও গত একশ বছরে আমরা অতিশয় কদর্যভাবে বিদায় নিতে দেখেছি বেশ কয়েকজন মহাপরাক্রমশালী স্বৈরশাসককে। এসব বহু নিন্দিত স্বৈরাচার আত্মমহিমায় এতই মগ্ন ছিলেন যে, কখন তারা জনতার রুদ্ররোষে উপলখণ্ডের মতো ভেসে গেছেন-তারা নিজেরাও বুঝতে পারেননি। হিটলার শেষ মুহূর্তে ভেবেছিলেন জার্মান আর্য জাতির নীল রক্ত কখনো পরাভূত হবে না। কুখ্যাত এ ফুয়েরারকে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল। তারই এক সহোদরসম স্বৈরমিত্র মুসোলিনির পরিণতি আমরা সবাই জানি। মার্কোস পলায়ন করেন তার ‘প্রিয় দেশবাসীর’ হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। রক্ষা পাননি ফ্যাসিস্ট ফ্রাঙ্কো।


কোনো কোনো ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অনুকম্পা পেলেও স্বৈরতন্ত্রের অনিবার্য পরিণতি ডেকে এনেছে হত্যার মহামিছিল, দুর্ভিক্ষ ও বিচ্ছিন্নতার মতো বিপর্যয়। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা অখণ্ড রাখতে ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তান রাষ্ট্রকে, খণ্ডিত হয়েছে সুদান, বিচ্ছিন্নতার মুখোমুখি আমাদের প্রতিবেশী বার্মা। এ রকম অসংখ্য দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত।



তবে ইতিহাসের বহু কথিত, বহু চর্চিত একটি আপ্তবাক্য-ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। ইতিহাসের শিক্ষা কেন ক্ষমতার কষ্টকল্পিত প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না-সে এক আশ্চর্য রহস্যময় জিজ্ঞাসা; যার উত্তর কোনোদিন কোনোকালেই কোনো স্বৈরাচার দিতে পারেননি। তবে নিষ্ঠুরভাবে ভোগ করেছেন ইতিহাসের অমোঘ পরিণতি।


স্বৈরাচার শেখ হাসিনাও তার ব্যতিক্রম নন। তার অলিন্দ উপচে পড়েছিল স্বৈরাচারের সর্বপ্রকার উপাদানে-কী অর্থনীতি, কী রাজনীতি, কী সমাজ, সংস্কৃতি-সর্বত্র তার আগ্রাসী স্বৈরতন্ত্র ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষুধার্ত হায়েনার মতো। বিশ্বের বহু স্বৈরাচারীর অসংখ্য ‘কীর্তি’ বিবর্ণ হয়ে গেছে হাসিনার ‘মহাকীর্তির’ কাছে। আলাদীনের দৈত্য ফ্যাসিবাদের সবগুলো চেরাগ ধরিয়ে দেয় হাসিনার হাতে এবং ইতিহাস আতঙ্কে হেসে উঠেছে তার অবধারিত বিনাশের গতিপথের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।


আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, আপনারা সবাই গত পনেরো বছরে হাসিনা সরকারের ‘অবদান’ সম্পর্কে জানেন। ‘জানেন’-এ শব্দটি ব্যবহার করার চেয়ে আমার মনে হয় ‘মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছেন’ বলা অধিকতর যুক্তিসংগত। শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের ন্যূনতম অস্তিত্বের বিনাশ সাধন করেছেন, অবারিত লুণ্ঠনের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করেছেন, ঋণভারে বিধ্বস্ত করেছেন সমগ্র জাতিকে (বৈদেশিক ঋণ উনিশ লাখ কোটি টাকা), নিষ্ঠুর পৈশাচিকতায় নির্মম হাতে গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করেছেন, অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের কণ্ঠ রুদ্ধ করেই তিনি তৃপ্ত হননি- স্বৈরাচারের নির্বিঘ্ন রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলার কুবাসনায় হাজার হাজার দেশপ্রেমিককে কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন, জীবনযাপনের ন্যূনতম চালিকা চাহিদাগুলো দুর্লভ করে ১৮ কোটি মানুষের জীবনকে করে তুলেছেন অবর্ণনীয় কষ্টের কারাগার। আমি আমার বিভিন্ন প্রবন্ধ-নিবন্ধে এবং সভা-সমিতিতে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছি। পাশাপাশি গভীরভাবে এ আশাবাদও ব্যক্ত করেছি যে, স্বৈরতন্ত্রের পতাকাবাহী হাসিনাতন্ত্রের পতন অনিবার্য। কেননা ইতিহাসের অপ্রতিরোধ্য সত্য এবং সেই সত্যের পথে ইতিহাসের অভিযাত্রা কেউ রুখতে পারে না।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us