শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে পাশে ছিলাম। কারণ, তাঁদের পাশে থাকাটা নৈতিক দায়িত্ব মনে হয়েছে আমার। এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীর দাবিকে নানাভাবে অবহেলা করা হচ্ছিল, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা হচ্ছিল। এমনকি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্রকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে, সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। যেদিন নিরস্ত্র আবু সাঈদকে একদম সবার সামনে দিনে দুপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ফেলা হলো, সেটা দেখে আর ঘরে বসে থাকতে পারছিলাম না। সেদিনই সারা দেশে পাঁচজনের নিহতের খবর প্রকাশ পায়। উল্টো ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে দেশবাসীকে অন্ধকারে ঠেলে দিল সরকার। এই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ গত ১৯ জুলাই বেলা ১১টায় সংসদ ভবনের সামনে প্রায় শতাধিক নাট্যাভিনেতা, পরিচালক, থিয়েটারকর্মীসহ আমরা অবস্থান নিই।
ইন্টারনেট বন্ধ রেখে, কারফিউ দিয়ে, প্রতিদিন পুলিশ দিয়ে শত শত ছাত্র, শিশু, সাধারণ মানুষকে খুন করেছে সরকার। বিশ্ববাসীর কাছে প্রচার করেছে অন্য গল্প সরকারের মন্ত্রীরা। থামছে না, উল্টো মানুষের মৃত্যু যেন তাদের কাছে সংখ্যা ছাড়া আর কিছু নয়। শত শত মানুষ মেরে হলেও ছাত্রদের দাবিয়ে দেবে। জীবনের কোনো মূল্য নেই। রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি হানাদারদের মতো পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ ছাত্রদের তুলে নিচ্ছে, নির্যাতন করছে। ডিবি অফিসে তুলে নিয়ে গিয়ে চাপ দিয়ে বিবৃতি আদায় করে ভাত খাওয়ানোর দৃষ্টিকটু নাটক টিভিতে প্রচার করে আন্দোলনকে দমিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করছে। ওরা ভুলে গেয়েছিল এই দেশে ছাত্ররাই ১৯৫২, ১৯৬৯, ১৯৭১-এর নায়ক। এমনকি ১৯৯০-এর গণ-অভ্যুত্থান ছাত্রদের আন্দোলনের ফসল। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে বুকে-পিঠে নূর হোসেন লিখে এনেছিলেন ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। আওয়ামী লীগের কর্মী ছিল। সব ইতিহাস যেন ক্ষমতার ভারে ভুলে গেছে।