সম্প্রতি সংঘটিত অশান্তির প্রাথমিক কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সরকারি চাকরির বিতর্কিত কোটাব্যবস্থা। সরকারের প্রতিক্রিয়া সময়োপযোগী না হওয়ায় এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা, গ্রেফতার এবং ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটসহ বিক্ষোভের প্রতি সরকারের প্রতিক্রিয়া সমস্যা আরও তীব্র করে তোলে। এ প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে!
গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার জন্য বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাসহ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই কাজ করতে হবে। রাজনীতিতে তরুণ নেতা ও পেশাজীবীদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা অপরিহার্য। এটি রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং মেন্টরশিপ সুযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্জন করা যেতে পারে-যা শাসন, নৈতিকতা ও জনসেবাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
নির্বাচনি সংস্কার বাস্তবায়নে অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেম, প্রচারণার অর্থের কঠোর নজরদারি এবং ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মতো পদক্ষেপগুলো নির্বাচন পরিস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
নাগরিক সম্পৃক্ততাকে উৎসাহিত করতে নাগরিকদের তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষা এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করা অধিকতর সক্রিয় ভোটারদের উৎসাহিত করতে পারে। যুবকদের মধ্যে নাগরিক কর্তব্যবোধ গড়ে তোলার জন্য নাগরিক শিক্ষাকে জাতীয় পাঠ্যক্রমে একীভূত করতে হবে।
দুর্নীতি মোকাবিলায় জিরো টলারেন্স নীতি প্রয়োগ করতে হবে। দুর্নীতিবিরোধী আইন শক্তিশালী করা, সরকারি লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং সরকারি কর্মকর্তাদের জবাবদিহির মাধ্যমে দুর্নীতিকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাজনৈতিক সংলাপকে উৎসাহিত করতে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সংলাপের জন্য প্ল্যাটফরম স্থাপন বিভাজন দূর করতে এবং ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও সহযোগিতার সংস্কৃতিকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। স্বল্পমেয়াদি রাজনৈতিক লাভের চেয়ে জাতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ও কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারি।
প্রাথমিক দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট এক রূপান্তরের দিকে যাচ্ছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে সরকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের বিকল্প নেই। এটি উত্তেজনা কমাতে এবং সহযোগিতামূলক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করবে বলে মনে করি। এক্ষেত্রে গঠনমূলক আলোচনার সুবিধার্থে নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করাটা কাম্য, যেমন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা সুশীল সমাজ।
অবিলম্বে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাটা সমীচীন বলে আমার ব্যক্তিগত অভিমত। অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া হতে পারে উত্তেজনা প্রশমনের মহৌষধ বা একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদক্ষেপ। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক উভয় স্বাধীন নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের নির্বাচনি প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। নির্বাচনি প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে নির্বাচনি সংস্কার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং জালিয়াতি রোধে প্রযুক্তি ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
শিক্ষার্থী এবং সুশীল সমাজের উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন বলে আমার অভিমত। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করাটা হবে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে অত্যন্ত দূরদর্শী পদক্ষেপ। বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের মতো প্রধান গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। এটি গণতন্ত্র ও আইনের শাসন এবং সরকারের অঙ্গীকারের প্রতি জনগণের আস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও সহিংসতা থেকে রক্ষার পদক্ষেপ জরুরি।