একজন সফল ও দৃঢ়চেতা উদ্যোক্তার প্রতিকৃতি

যুগান্তর ড. আর এম দেবনাথ প্রকাশিত: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১৩:১৭

চার বছর আগের কথা। ২০২০ সাল। সারা দেশ এক কঠিন অজানা অতিমারিতে আক্রান্ত। অচেনা ভাইরাস ‘কোভিড-১৯’ সারা বিশ্বকে গিলে খাচ্ছে। দেশে দেশে, মানুষে মানুষে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। বাজার বন্ধ। মানুষ সব ঘরবন্দি। এমনকি নিজ গৃহেও চলাচল অতি সন্তর্পণে। অর্থনীতি অচল। মানুষের তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। চারদিকে শুধু মৃত্যুর সংবাদ। আতঙ্ক, ভয়, আশঙ্কা সর্বত্র। সে সময় আমরা দেশের অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তিকে হারাই-বলা যায় অসময়ে। কবি, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সাধারণ নাগরিক কেউ বাদ যাননি। হাজার হাজার নাগরিকের প্রাণ যায় বাংলাদেশে। তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন নুরুল ইসলাম-শিল্পপতি, সংগঠক এবং সমাজ সংস্কারক। তিনি ইন্তেকাল করেন ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে। তারিখটি ছিল জুলাই মাসের ১৩। তখন তার বয়স মাত্র ৭৪ বছর। একের পর এক নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান খুলে যাচ্ছেন। নতুন নতুন ব্যবসা। সে সময়ই তার জীবনাবসান ঘটে। আমরা হারাই একজন সফল উদ্যোক্তাকে, যার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।


প্রথিতযশা উদ্যোক্তা-শিল্পপতি, যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের স্বত্বাধিকারী নুরুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের মে মাসের ৩ তারিখে। ঢাকার পাশেই দোহার-নবাবগঞ্জে। তার ব্যবসাজীবনের শুরু স্বাধীনতার পরপরই। মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বুঝেছিলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। বাঙালি কর্মঠ জাতি। আমাদের সম্পদ রয়েছে প্রচুর। পাট, চা ও মানবসম্পদ। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাঙালি জাতির নেতা। তিনি নতুন করে বাংলাদেশ গড়তে চাইছেন। ব্যবসায়ীদের বলছেন দেশ গড়ার কাজে লাগতে। জিনিসপত্রের অভাব। পশ্চিম পাকিস্তানিরা এদেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। একটা শূন্যতা শিল্প ও ব্যবসা ক্ষেত্রে। নুরুল ইসলাম এ সুযোগটাই কাজে লাগালেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন যমুনা ইলেকট্রিক ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি লিমিটেড। এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের শীর্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। বস্তুত এ কোম্পানিটি দেশে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি প্রস্তুতকরণের ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক। প্রয়াত নুরুল ইসলামের স্ত্রী লব্ধপ্রতিষ্ঠ রাজনীতিবিদ এবং বর্তমান সংসদ-সদস্য সালমা ইসলাম। তিনি চার সন্তানের জনক, যারা সবাই বর্তমানে পিতার অনুপস্থিতিতে বিশাল যমুনা গ্রুপের হাল ধরেছেন।


যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সফলতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নুরুল ইসলামের কঠোর পরিশ্রম, মেধা, অভিজ্ঞতা এবং সর্বোপরি দূরদর্শিতা। আজ থেকে ২৫ বছর আগে ১৯৯৯ সালে তিনি দৈনিক যুগান্তর প্রতিষ্ঠা করেন। এ কাগজটি ছাপা ও প্রকাশিত হয় যমুনা প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিং লিমিটেড থেকে। তখনকার সময় এত বিপুলসংখ্যক দৈনিক ও সাপ্তাহিক কাগজ ছিল না। ওই সময় তিনি বুঝতে পারেন, দেশে একটি ভিন্নধর্মী, সাহসী ও সত্যনিষ্ঠ কাগজের দরকার, যেটি নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে সংবাদ পরিবেশন করবে। ওই কাগজের জন্য তিনি বেছে বেছে সাংবাদিক নিয়োগ দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত যুগান্তর নিরপেক্ষ দৈনিক হিসাবে কাজ করে যাচ্ছে। এটি এখন লব্ধপ্রতিষ্ঠ দৈনিক। যুগান্তর অনুসরণ করে নুরুল ইসলামের নির্দেশিত পথ। কী সেই অনুসরণযোগ্য পথ। নুরুল ইসলাম চেয়েছিলেন স্বাধীন, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। তার প্রদর্শিত পথ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তির পথ। দক্ষতার পথ। এ পথেই তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি, ইন্ডাস্ট্রি, প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিস্তৃতি লাভ করেছে অনেক ব্যবসাক্ষেত্রে, অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে। নুরুল ইসলামের শিল্প জগতের পরিধির মধ্যে রয়েছে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, অটোমোবাইল, গণমাধ্যম, রাসায়নিক দ্রব্য, প্রকৌশল, বস্ত্রশিল্প ইত্যাদি।


উদ্যোক্তা হিসাবে তিনি যে কাজেই হাত দিয়েছেন, তাতেই সফল হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-তিনি কখনো ঋণখেলাপির খাতায় নাম লেখাননি। এটা আমাদের শিল্প জগতে, ব্যবসা জগতে বিরল একটি ঘটনা, যা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। অন্যদের অনুকরণের মতো ঘটনা এটি। কী করে একের পর এক শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায় খেলাপি না হয়ে, তার উদাহরণ যমুনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ।


বলাই বাহুল্য, তার এ উত্থান বিনা বাধায় হয়নি। তাকে অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে যমুনা গ্রুপকে একটি সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হয়েছে। তাকে এজন্য লড়াই করতে হয়েছে। যমুনা টেলিভিশন চালু করতে তাকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। সেও এক দশকের ওপর। ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের ৫ তারিখে যমুনা টেলিভিশন চালু হয়। এর জন্য তাকে আইনি লড়াই করতে হয়েছে। দৃঢ়চেতা নুরুল ইসলাম শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। আজ এক দশক পর যমুনা টেলিভিশন যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে খবর পরিবেশন করে চলেছে। টিকে নয়, দুই-তিন ডজন টেলিভিশন চ্যানেলের মধ্যে যমুনা টেলিভিশন মাথা উঁচু করে টিকে আছে। বস্তুত যমুনা টেলিভিশন এবং দৈনিক যুগান্তর সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে এবং যমুনা গ্রুপের ‘ফ্ল্যাগশিপ’ কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। যমুনা গ্রুপ মানেই নুরুল ইসলাম এবং যমুনা গ্রুপ মানেই যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশন।


প্রয়াত নুরুল ইসলামের দূরদর্শিতা এবং উদ্যোগী মেধার আরেকটি জ্বলন্ত প্রমাণ হচ্ছে যমুনা ফিউচার পার্ক। ২০১০ সালের দিকে যখন এর নির্মাণ কাজ চলছিল, তখন অনেকের মনেই প্রশ্ন ও সন্দেহ ছিল-এটা কী করছেন নুরুল ইসলাম? নিজের পায়ে কুড়াল মারছেন? বসুন্ধরা অঞ্চলে এত বড় ‘মেগাশপ’, পণ্যের বাজার চলবে কি? দোকানগুলো বিক্রি হবে কি? গ্রাহকরা সেখানে যাবে কি? নানা প্রশ্ন। কিন্তু উদ্যোক্তা নুরুল ইসলামের এটাই ছিল শক্তি-তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এলাকাটির গুরুত্ব। এটি একটি আবাসিক অঞ্চল, বড় হাসপাতাল এখানে আছে। নামিদামি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এখানে আসবে। অদূরেই উত্তরা আবাসিক এলাকা। কাছেই গড়ে উঠছে পূর্বাচল উপশহর। এসব সম্ভাবনার ইঙ্গিত। তা বোঝার ক্ষমতা সবার থাকে না। এখানেই উদ্যোক্তার পরিচয়, এখানেই উদ্যোক্তার সফলতা। তারা ভবিষ্যৎ বাজার দেখতে পান। নুরুল ইসলামও দেখেছিলেন। তার এ মেগাশপ-যমুনা ফিউচার পার্ক-উন্মুক্ত হয় ২০১৩ সালে। আজ থেকে ১১ বছর আগে। বিরাট সাফল্য। ইতোমধ্যে এলাকাটির সঙ্গে মূল ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের বদৌলতে এখন দূর থেকেও যমুনা ফিউচার পার্কে যেতে কম সময় লাগে। এটি কুড়িলে অবস্থিত। দেশের বৃহত্তম শপিং কমপ্লেক্স। এতে ৫১০টি স্টোর সার্ভিস সেন্টার রয়েছে। সাততলা বিল্ডিং। বিনোদনের ব্যবস্থা আছে। ফুড কোর্ট আছে। দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের দোকান আছে। এখন এ মার্কেট জমজমাট, যা কেউ ভাবতে পারেনি এক দশক আগেও।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us