উপজেলা নির্বাচন যে অশনিসংকেত দিয়ে গেল

সমকাল এম সাখাওয়াত হোসেন প্রকাশিত: ১১ জুন ২০২৪, ১২:১৬

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের চতুর্থ, অর্থাৎ শেষ ধাপের নির্বাচন হয়েছে গত বুধবার। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত হওয়া ১৯ উপজেলার নির্বাচনও রোববার সম্পন্ন হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এবারের উপজেলা নির্বাচন কী বার্তা দিয়ে গেল?


এটা বলা দরকার, উপজেলা পরিষদ স্থানীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে তিনটি পদে নির্বাচন হয়: চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। এই স্তরের অনেক সরকারি কর্মকর্তা সরাসরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। কারণ উপজেলা পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ। যে কারণে উন্নয়ন, ত্রাণ, পুনর্বাসনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড উপজেলা পরিষদের এখতিয়ারভুক্ত।   


অস্বীকারের অবকাশ নেই, উপজেলা পরিষদ ছিল স্থানীয় সরকার পর্যায়ের একটা যুগান্তকারী সংযোজন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ক্রমেই এর গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যানকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। আবার দেখা যায়, এক উপজেলায় দুই সংসদ সদস্যের কর্তৃত্ব থাকে। এতে উপজেলা পরিষদের যে গুরুত্ব ছিল, তা কমে গেছে। তার মানে উপজেলার উন্নয়ন, ত্রাণসহ সব কাজে সংসদ সদস্যের পরামর্শ নিতে হয়। বস্তুত পরামর্শ না। বলা চলে, তাঁর ইচ্ছাই বাস্তবায়ন হয়। নির্বাচনে যদি বহু দল অংশগ্রহণ না করে এক দলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবে উপজেলা পরিষদের যে উদ্দেশ্য, সেটাও হাসিল হয় না। 


এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বিশেষভাবে বলার কিছু নেই। কারণ গত নির্বাচনও তেমন ছিল, তার আগেও অনুরূপ। বস্তুত গত কয়েক বছরের জাতীয় নির্বাচনের আদলেই উপজেলা নির্বাচন হচ্ছে। মাঝে দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচন দেওয়া হয়, যেখানে দলের মধ্যে মারামারি, কাটাকাটির ঘটনা ঘটে, পরে পরিবর্তন হয়। 


এবারের উপজেলা নির্বাচন হয়েছে একতরফা। যারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তারা উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেয়নি। এই একতরফা নির্বাচনে মানুষ আগ্রহ দেখায়নি। এ ধরনের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি টেনেটুনে ৩০-৩৫ শতাংশ বলা হচ্ছে। বাড়ির কাছের স্থানীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের আদর্শ অনুসারে এমন উপস্থিতি খুবই কম হিসেবে দেখা হয়। অনেক জায়গায় খবর নিয়ে জানা গেছে, ১৫-১৬ শতাংশ ভোটারও উপস্থিত হয়নি। কোথাও তারও কম। 


তবে নির্বাচন কমিশন যে পরিসংখ্যান দেয়, সেটাই রেকর্ডে থাকে। তারা যা পেয়েছে, সেটাই হয়তো দিয়েছে। অথবা তাদেরকে যেটা বলানো হয়েছে, সেটাই বলেছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই যেখানে মানুষের আগ্রহ নেই, সেখানে স্থানীয় নির্বাচনে কীভাবে আগ্রহ থাকবে? 


যেখানে অনেক দল কিংবা তাদের সমর্থকরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আগ্রহ থাকে না। এখন নির্বাচন হয়ে গেছে এক দলের, একচেটিয়া। নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি, কোন্দল। এসব কারণে ভোটাররা ভোট দিতে আসে না। নিজেদের পছন্দের প্রার্থী না থাকাও এর কারণ। তা ছাড়া ভোট এখন হয়ে গেছে টাকার খেলা। ভোটাররা এখন স্বেচ্ছায় ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না। টাকা দিলে যাচ্ছে। প্রার্থীদের টাকা বিতরণের ছবিও আমরা দেখেছি। এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, কারণ দুর্নীতির পরিধি এখন বেড়েছে। কোনো একটা অবস্থানে থাকলেই টাকা। সংবাদমাধ্যমে দেখেছি, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা লুট হয়েছে। ঠিক কত টাকা লুট হয়েছে, আমরা জানি না। কিন্তু এর সঙ্গে জাতীয় সংসদ সদস্যদের জড়িয়ে থাকার বিষয়টি বেদনাদায়ক। 


জবাবদিহির সব পর্যায় ভেঙে পড়েছে। এখন সংসদ সদস্যরা যা বলেন, সেটাই হচ্ছে। তাদের অনেকেই যে অপরাধের সঙ্গে জড়িত– সেটা আনোয়ারুল আজীম আনারের মৃত্যুর মাধ্যমেই প্রমাণ হয়। পুলিশের সাবেক একজন আইজির ‘সম্পদের পাহাড়’ নিয়ে একের পর এক খবর বের হচ্ছে। জবাবদিহি না থাকার কারণেই এমনটা হচ্ছে। নির্বাচনগুলোর অবস্থাও এমন। কোনো জবাবদিহি নেই।


এবারের উপজেলা নির্বাচনে বলা হয়েছিল, এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। কারণ বহু বছর থেকে পরিবারতন্ত্র আমাদের রাজনীতিতে গেড়ে বসেছে। ছেলেমেয়েরা রাজনীতি করতে পারবে না– এমনটা নয়। কিন্তু এমপি-মন্ত্রীর পরিচয়ে তার স্বজনরা যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, সংকটটা সেখানেই। উপজেলা নির্বাচনের প্রায় প্রতিটি ধাপেই এমন চিত্র দেখা গেছে।


একদিকে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের প্রভাব, অন্যদিকে ভোটারবিহীন নির্বাচন, নির্বাচনে টাকার খেলা এবং সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করা। এমন যদি হয় চিত্র, তবে আমরা কীভাবে সেটাকে প্রতিনিধিত্বশীল নির্বাচন বলি? উপজেলায় প্রতিনিধিত্বমূলক জনপ্রতিনিধি কীভাবে আমরা পাব? 


এসব কারণে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমান্তরালে উপজেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনটা ভেঙে পড়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের যে কাজ, তার বাইরে সব কিছু করেন। পুলিশের নিয়োগ বাণিজ্যসহ অন্যান্য কাজেও তাদের হস্তক্ষেপের কথা আমরা শুনি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us