গত কিছুদিন ধরে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ও সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মে মাসে ঘটে যাওয়া পরপর তিনটি ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। প্রথমে সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড, তারপর সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং সর্বশেষ বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি ফাঁস ও তার সম্পত্তি জব্দ করা নিয়ে আদালতের নির্দেশ। এ ঘটনাগুলোর মধ্যে বেনজীরকে নিয়েই লেখালেখি ও আলোচনা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। ফলে বাকি দুটি ঘটনা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে।
পুলিশ, একটি রাষ্ট্রের সরকারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ছাড়াও সমাজের অনেক সেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকতে হয় পুলিশকে। এছাড়া দেশের অনেক দুর্যোগ-দুর্ভোগ মোকাবিলায় পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিকেই নিয়োগ দেওয়া হবে-এটাই প্রত্যাশা। পেশাগত যোগ্যতার দিক দিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসাবে বেনজীরকে নিয়োগ দেওয়া সরকারের ভুল ছিল, সে কথা বলব না। পুলিশের মহাপরিদর্শকের পদ অলংকৃত করার মতো যোগ্যতা ছিল তার। তবে তাকে নিয়োগ দেওয়ার সময় শুধু পেশাগত যোগ্যতাই কি বিবেচনা করা হয়েছিল? নিঃসন্দেহে তা নয়। তাকে নিয়োগের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি তার অকৃত্রিম আনুগত্যও যে কাজ করেছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ কথা সবাই জানেন, এ পদে নিয়োগ পাওয়ার আগে বেনজীর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসাবে আওয়ামী লীগ সরকারকে চাহিবামাত্র সেবা দিয়ে যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর (২০০৯-২০২২) বেনজীর বরাবরই সরকারের সুনজরে ছিলেন। এ সময় তিনি গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদে নিয়োগ পান। ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর বেনজীর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঠিক একইভাবে তিনি ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। এ সময় ভিন্নমত ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে তিনি এতটাই উৎসাহিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ সরকার তখন তাকে অপরিহার্য মনে করেছিল। এজন্যই সরকার তাকে এত লম্বা সময় এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রেখেছিল। তারপরই তাকে পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি ২০২০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।