তিস্তা সমস্যা নিয়ে বহুযুগ ধরে বার বার শুধু কথা চলে আসছে। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বাংলাদেশের তিস্তা তীরবর্তী কয়েক কোটি মানুষের জীবনধারণের সাথে সম্পর্কিত বহুবিধ আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন। ফিবছর খরা যায়, বর্ষা আসে। তাপে পুড়ে যায়, অকাল বন্যায় ভেসে যায় জমির ফসল। থমকে যায় সেসব সমস্যা প্রতিকারের সব প্রচেষ্টা।
গত ১৯৯৩ সাল থেকে তিস্তা নদী সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। কিন্তু এর সমস্যাগুলোর বড় অংশ অভিন্ন, আন্তর্জাতিক ও দ্বিপাক্ষিক হওয়ায় বাংলাদেশের একার পক্ষে সমাধান করা দুরুহ ব্যাপার।
তাই প্রতিবেশী ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার ভিত্তিতে চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমাধানের জন্য বার বার বৈঠক করে প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। গত তিন দশকের অধিক সময় ধরে শতাধিক বৈঠকে নানাবিধ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে অনেকগুলো চুক্তি সই করা হয়েছে। কিন্তু নানা কারণে ও অজুহাতে সেগুলো ফলপ্রসূ হয়নি। উজান দেশের অসহযোগিতা ও একগুঁয়েমী মনোভাবের কারণে তিস্তা সমস্যা দীর্ঘদিন ফাইলে আটকে রাখা হলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৪ সাল থেকে তিস্তা নদীর পানিবন্টন সমস্যার জট খুলতে শুরু করে এবং কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাওয়া যায়।
কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাথে মতের অমিল থাকায় সেসব প্রচেষ্টা বার বার হোঁচট খেয়ে ভেস্তে যায়। বিশেষ করে খরার সময় তিস্তা নদীর পানিসংকট সমস্যা কেন্দ্র ও রাজ্যের পারস্পরিক দোষারোপ ও মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ির মধ্যে চরম বৈপরীত্য পরিস্ফুট হয়ে উঠে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার প্রহর গুনে হতাশ হয়ে পড়ে সরকার ও তিস্তা পাড়ের ভুক্তভোগীরাসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষ।
অনির্দিষ্টকালের জন্য ভারতের নিকট থেকে আশানুরুপ সাড়া না পেয়ে বাংলাদেশ বিকল্প উপায় খুঁজতে থাকে। এর প্রেক্ষিতে তৃতীয় কোনো পক্ষকে তিস্তা পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানানো হলে এগিয়ে আসে চীন। তারা চীনের দুঃখ বা হোয়াংহো নদীর পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তিস্তা সমস্যা সমাধানে হাত বাড়ায়।