ইনসাফ তথা ন্যায়বিচার এমন এক অপরিহার্য ও প্রশংসিত গুণ, যা ছাড়া মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে শান্তি, শৃঙ্খলা, উন্নতি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সম্ভব নয়। ইনসাফ না থাকার কারণে মানবজীবনের সর্বস্তরে অন্যায়-অবিচার সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়ায়। মানুষের স্বভাবে স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষ, যে কোনো মূল্যে নিজ স্বার্থ হাসিলের প্রবণতা জন্ম নেয়।
মানুষ যখন ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, তখন কেউ কারও প্রতি অন্যায়-অবিচার করবে না, কারও অধিকার খর্ব হবে না, শান্তি-শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না। এ কারণে আল্লাহ মানুষকে ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসংগত কাজ ও অবাধ্যতা করতে বারণ করেন।’ (সুরা নাহল: আয়াত ৯০)। ‘যখন তোমরা কথা বলো (বিচারক কিংবা সাক্ষী হিসেবে), তখন সুবিচার করো, যদিও সে আত্মীয় হয়’ (সুরা আনআম: আয়াত ১৫২)।
কোনো ধনী বা প্রভাবশালী ব্যক্তির প্রতি কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব কিংবা অবিচার না করার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সংগত সাক্ষ্য দান করো, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের যদি ক্ষতি হয়, তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্ক্ষী তোমাদের চাইতে বেশি। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ কোরো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলো কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজকর্ম সম্পর্কে অবগত (সুরা আন নিসা: আয়াত ১৩৫)।
বিচারকাজে কোনো উপঢৌকন কিংবা উৎকোচ দিয়ে রায় নিজের কিংবা নিজ পক্ষে আনার চেষ্টার বিরুদ্ধে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের ধন অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না এবং মানুষের ধনসম্পদের কিয়দংশও জেনেশুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকদের ঘুষ দিও না (সুরা আল বাকারা: আয়াত ১৮৮)।