বাংলাদেশে শিশুশ্রম দীর্ঘদিন ধরে একটি জটিল সমস্যা হিসেবে বিদ্যমান। প্রতি বছর লাখ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করে তাদের জীবন ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মুখে ফেলে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (ILO) সংজ্ঞা অনুযায়ী, যেসব কাজ শিশুদের শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকর এবং তাদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ কেড়ে নেয়, সেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বলা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক প্রকাশিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, দেশে ৫-১৭ বছর বয়সী ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শিশু শ্রমজীবী রয়েছে। শ্রমে থাকা শিশুদের মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
প্রতিবেদনে ৫-১৭ বছর বয়সী শিশু জনসংখ্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। এই বয়সের মোট শিশু জনসংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। যেখানে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী ৫৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু রয়েছে। দেশে ২ কোটি ৭৬ লাখ ৩০ হাজার খানায় ৫-১৭ বছর শ্রমজীবী শিশু রয়েছে।
জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, শিশু শ্রমিকের ৮২ শতাংশ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে, উৎপাদনে ৩৩.৩ শতাংশ এবং কৃষি, বনায়ন এবং মাছ ধরায় ২৩.৬ শতাংশ নিয়োজিত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশু শ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮.৮ শতাংশ এবং স্কুলে যায় ৫২.২ শতাংশ।
শিশু শ্রমিকদের গড় মাসিক আয় ৬,৬৭৫ টাকা। এছাড়া ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী রয়েছে, যাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না এবং ৮০ হাজার যারা পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত, উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক খাত যেখানে কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা যথাক্রমে ১০ লাখ ৭০ হাজার, ১১ লাখ ৯০ হাজার এবং ১২ লাখ ৭০ হাজার শিশু শ্রমিক রয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার শিশুদের সুরক্ষার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি খাতকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। এই খাতগুলোতে শিশুদের নিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ খাতগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো মাছ, কাঁকড়া, শামুক/ঝিনুক সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং শুঁটকি মাছ উৎপাদন। এসব কাজে শিশুরা বিপজ্জনক রাসায়নিক, ধারালো যন্ত্রপাতি এবং অন্য ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।