সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরই নিতে দিন

সমকাল সৈয়দ আনোয়ার হোসেন প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৪২

বুয়েট তথা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ভাগ হয়ে গেছে। এক ভাগ চাচ্ছে রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস। আরেক ভাগ চাচ্ছে রাজনীতি আসুক। দুই পক্ষেরই যুক্তি আছে। তবে সেখানে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না, তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদেরই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বুয়েটের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির ব্যাপারে দায়িত্বশীল হিসেবে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। 


প্রাসঙ্গিকভাবে আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা বলি। ১৯৭২ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। উপাচার্য ছিলেন মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী। তাঁর কাছে মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষার্থীরা গিয়ে অটোপ্রমোশনের দাবি জানায়। তারা বটতলায় মিছিল-মিটিং করে; উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপিও দেয়। তিনি রেগেমেগে বললেন, আপনাদের অটোপ্রমোশন কেবল আমার মৃতদেহের ওপর দিয়েই হতে পারে। আন্দোলনকারীরা উপাচার্যের কক্ষের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয়; ফোন সংযোগ কেটে দেয়; পানিও বন্ধ করে দেয়। তিনি অসুস্থ মানুষ; ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ছিল। 


ওই দিন সাড়ে ৩টার সময় বঙ্গবন্ধু খোঁজ পেলেন– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অবরুদ্ধ। তিনি নিজেই চলে এলেন। আন্দোলনকারীদের ধমক দিয়ে তালা খোলালেন। আমার নিজের চোখে দেখা– বঙ্গবন্ধু উপাচার্যকে বলেছেন, স্যার, পোলাপাইনরে মাফ কইরা দেন। তিনি চাইলেন উপাচার্যকে নিজের গাড়িতে করে বাসভবনে পৌঁছে দিতে। মুজাফফর আহমেদ চৌধুরী বললেন, আমি হেঁটেই যেতে পারব। এর পর কাঁপতে কাঁপতে উঠে হাঁটতে শুরু করলেন। পরে দু’জন দুই পাশ থেকে গিয়ে দাঁড়ালে তাদের কাধে ভর দিয়ে বাসভবনে চলে গেলেন। সেই উপাচার্য আমি দেখেছি; আর এখন আমরা কী দেখছি?


মধ্য ষাটের দশকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। ওই সময় ছাত্রনেতাদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা ছিল। প্রথম বছর এসএম হলের পশ্চিম বাড়ির দোতলায় ১৩৮ নম্বর রুমে আমার অবস্থান ছিল। আমার পাশের বিছানায় ছিলেন আব্দুল আজীজ বাগমার, অপূর্ব সংসদের প্রতিষ্ঠাতা। আমিও সেই সংসদের সদস্য ছিলাম। তাঁর পড়াশোনা দেখেছি, আচরণ দেখেছি। আব্দুর রাজ্জাক ভাই বড় নেতা। তাঁর পড়াশোনা দেখেছি। বঙ্গবন্ধুর চার খলিফার পড়াশোনা দেখেছি। 


আমার কথা হচ্ছে, ক্যাম্পাস রাজনীতিমুক্ত থাকবে কিনা– সেই সিদ্ধান্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি থাকতে হবে। তবে সে রাজনীতি জীবনঘনিষ্ঠ। যে রাজনীতি জীবনের কল্যাণধর্মী দিকটি নিশ্চিত করবে, সেই রাজনীতি থাকতে হবে। আজকের ছাত্র রাজনীতির মধ্যে আমি ছাত্রও পাচ্ছি না, রাজনীতিও পাচ্ছি না। ছাত্রের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বই-খাতা-কলম থাকবে, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত থাকবে, গ্রন্থাগারে থাকবে। কিন্তু সেখানে এদের পাওয়া যাচ্ছে না। এরা মোটরসাইকেল বা গাড়িতে যাতায়াত করে। টেন্ডারবাজি করে। বাংলা একাডেমিতে থাকার সময় সে অভিজ্ঞতা আমার খুব ভালো হয়েছে।


একটা কথা মনে রাখতে হবে– ছাত্রলীগ কিন্তু আওয়ামী লীগ থেকে দেড় বছরের বড়। বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের নেতাদের কাছে চিরকুট পাঠাতেন, ডেকে আলোচনা করতেন। আমি এর সাক্ষী। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ থেকে ছাত্রলীগের কমিটি করে দেওয়া হয়। কেন তা করা হবে? ছাত্রলীগের নিজস্ব অস্তিত্ব কোথায়?
মৌলবাদের কথা বলা হচ্ছে। মৌলবাদী রাজনীতি হলে তো ভালো। মৌলবাদী ইসলাম অথচ ইসলামের মূলের অনুসরণ নেই। ধর্মান্ধতার রাজনীতি বলা যায়। সব জায়গায় যেমন ছাত্রলীগ আছে; ধর্মান্ধতার রাজনীতিও আছে। কোথায় নেই? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তো আছে।   


আবরার ফাহাদকে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগ। তার হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক মিলে ২০১৯ সালের ১১ অক্টোবর ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সেটা আদালত বাতিল করে দেন। আমি মনে করি, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষের দুটি কাজ হঠকারী হয়েছে। একটা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চটজলদি শিক্ষার্থীর সিট বাতিল করে দিয়েছে। ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি ছয় সদস্যের কেন? বেজোড় সংখ্যা হবে। হয় ৩ হবে বা ৫ অথবা ৭। তার মানে, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে। 

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us