২৪ নভেম্বর ২০১২। ঢাকা থেকে একটু দূরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশন ফ্যাক্টরিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। সেই অগ্নিকাণ্ডে ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। আহত হয় প্রায় দুইশ জনের মতো। অগ্নিকাণ্ডের পরেও মৃত্যুও হয় আরও কয়েকজন শ্রমিকের।
তাজরিনের এই ফ্যাক্টরিটি আশি বা নব্বই দশকের সেইসব পুরোনো জরাজীর্ণ বিল্ডিংয়ে স্থাপিত কোনো ফ্যাক্টরি ছিল না। ভবনটি বিশেষভাবে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির জন্যেই ডিজাইন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। আধুনিক ঝাঁ ঝকচকে বিল্ডিং। আইনে আছে এইরকম কোনো বিল্ডিংয়ে একটা বাড়তি সিঁড়ি থাকবে, ইংরেজিতে যাকে বলে ফায়ার এক্সিট, আগুন লাগলে যে সিঁড়ি দিয়ে মানুষ নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারবে।
সেই সিঁড়িটা গিয়ে নামবে মূল ভবনের বাইরে। কিন্তু সেই বিল্ডিংয়ে ফায়ার এক্সিট ছিল না। যে বাড়তি সিঁড়িটা ছিল তা গিয়ে নেমেছে বিল্ডিংয়ের ভেতরেই একতলায়। ফ্যাক্টরির ক্ষেত্রে আরেকটা বিধান আছে যে ফ্যাক্টরি থেকে নির্গমনের পথটা কখনো বন্ধ রাখা যাবে না—তাজরিন ফ্যাক্টরিতে সব নির্গমনের পথ বাইরে থেকে তালা মারা ছিল। এই কারণেই আগুন লাগার পর সেইখান থেকে শ্রমিকরা বের হতে পারেনি, বদ্ধ খাঁচায় আটকে পড়া ইঁদুরের মতো পুড়ে মরেছে।
আপনি যদি জানেন যে, আপনার একটি পদক্ষেপের জন্য বা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপটি না নেওয়ার জন্য মানুষের মৃত্যু হতে পারে এবং জেনেশুনেই যদি আপনি সেই কাজটি করেন বা প্রয়োজনীয় কাজটি করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে সেই ঘটনায় যদি কোনো মানুষের মৃত্যু হয় সেই মৃত্যুর দায় কার?
তাজরিনের মালিকপক্ষ জানতো যে ঠিকমতো ফায়ার এক্সিট তৈরি না করলে বা নির্গমনের পথ তালাবদ্ধ করে রাখলে আগুন লাগলে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এটা জেনেও ওরা ঠিকমতো ফায়ার এক্সিট রাখেনি এবং মূল নির্গমনের পথটা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে রেখেছে। তাহলে এই যে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে, সেই মৃত্যুর দায় কার? উত্তরটা সহজ এবং উত্তরটা আপনারা সকলেই জানেন।
আমাদের দেশের ফৌজদারি দণ্ডবিধির অধীনেও তাজরিনের শ্রমিকদের মৃত্যুর জন্য তাজরিনের মালিক দেলোয়ার হোসেন দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। সেই অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্তের শেষে পুলিশ সেই মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে। দেওয়ার হোসেনকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়েছিল, পরে জামিনে বেরিয়ে এসেছে। সেই মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। দেওয়ার হোসেন বহাল তবিয়তে আছে, এখনো একাধিক ফ্যাক্টরি চালিয়ে যাচ্ছে।