প্রায় ১০০ বছর আগে উইলিয়াম সমারসেট মম ‘দ্য লেটার’ নাটকে বলেছিলেন, “লেটার রাইটিং ইজ় আ ডায়িং আর্ট।” বিখ্যাত সেই নাটকে চিঠির অসীম ক্ষমতার পরিচয় মিলেছিল। নিভৃতে রচিত চিঠির অক্ষরগুলিতে বসত করে মানুষের মনের গোপনতম রহস্য, লুকানো আবেগ, প্রতিভার স্ফূরণ, সময়ের ইতিহাস। এক সময়ে দূরদেশবাসী আপনজনের কাছে খবর পৌঁছনোর মাধ্যম ছিল চিঠি। তাই নিয়ে ছিল পত্রসাহিত্য, রানারের গান। যোগাযোগ-বিপ্লব চিঠির সেই গৌরবকে ক্ষুণ্ণ করলেও কাড়তে পারেনি তার সেই বৌদ্ধিক সিন্দুকটিকে। তাই, আজ যদি স্মার্টফোনকে সরিয়ে রেখে চিঠি লেখার অভ্যাসটিকে আবার ঝালিয়ে নেওয়া যায়, তবে আমাদের মেধাসম্পদের রত্নগুলি অযত্নের ধুলো সরিয়ে ঝিলমিলিয়ে উঠবে। এখন অভিভাবকেরা সন্তানের বুদ্ধির বিকাশের জন্য নানা পন্থা অবলম্বন করেন। সে রকম এক উপায় হতে পারে ছোটদের চিঠি লিখতে শেখানো। ওদের বুদ্ধির, কলাচেতনার বিকাশ হবে, ডিজিটাল যুগের কুপ্রভাবগুলি থাকবে দূরে।
কেন এখনও প্রাসঙ্গিক
অ্যালফ্রেড জর্জ গার্ডিনার চিঠি লেখায় বিতৃষ্ণার অন্যতম কারণ বলেছিলেন সে যুগের নব্য ফ্যাশন পেনি পোস্ট আর মানুষের ব্যস্ততাকে। এই শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে চিঠি লেখার বিলাসকে একেবারেই ভুলিয়ে রেখেছে ইমেল, হোয়াটসঅ্যাপ এবং সমাজমাধ্যমের তাৎক্ষণিক যোগাযোগের প্রযুক্তিগুলি। এই ডিজিটাল পৃথিবীতে উপকরণের এতই ছড়াছড়ি যে কোনও একটি বিষয়ে মনকে দু’দণ্ড স্থির বসিয়ে রাখাই মুশকিল। রিল-সর্বস্ব দুনিয়া মানুষের একাগ্রতা নষ্ট করছে, প্রযুক্তি জীবন সহজ করতে গিয়ে চুরি করছে শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রমের স্পৃহা। কোভিড-উত্তর যুগে সোশ্যাল মিডিয়া এবং স্মার্টফোন এখন পড়াশোনার অন্যতম মাধ্যম। ছোটরা অ্যাপে, টেকনোলজির ব্যবহারে বড়দের চেয়েও দড়, তাই মানুষকে যন্ত্রনির্ভর জড়ে পরিণত করার ফাঁদে ওদের আটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা জানাচ্ছেন, বহু শিশুই মনঃসংযোগের অভাবে ভুগছে। চিঠি লেখা ও চিঠি পাওয়ার মজাটা এক বার এদের মধ্যে ঢুকিয়ে দিলে ওরা একমনে লিখতে বসে যাবে। ফোকাস করতে শিখবে, ফলে সিলেবাস আয়ত্ত হবে সহজে, চিত্তবিক্ষেপের প্রলোভনগুলিকে উপেক্ষা করে টানা মনঃসংযোগ করতে শিখে ফেললে যে কোনও সৃষ্টিশীল কাজে নিজের সেরাটা বার করে আনতে পারবে।