শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান দান করে, অনুসন্ধিৎসু ও উদার করে। কথায় বলে শিক্ষা যখন মন বেয়ে উঠতে থাকে, তখন সংকীর্ণতা পালিয়ে যায়। সারা দেশে যে ধর্ষণ ও নির্যাতন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে, তা বোঝা যাচ্ছে। নারীর নিরাপত্তার প্রতি অবজ্ঞা তাহলে অনিবার্য আমাদের সমাজে? সুস্থ সমাজ গঠন তাহলে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে? অন্য সব দূরে থাকুক।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ কী হচ্ছে? আজকের পত্রিকার ৩ ফেব্রুয়ারির খবর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের কারণে বহিষ্কৃত এক ছাত্রীকে কারণ দর্শাতে শিক্ষক তাঁর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাঁকে যৌন নির্যাতন করেন।
পরের দিনের খবর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ বহিরাগত একজন। এসব ট্র্যাজেডি রাখার জায়গা কই?
কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন চিকিৎসক কর্তৃক এক শিক্ষকের ১৩ বছরের কন্যাকে যৌন নির্যাতনের খবর এখন এলাকায় মুখে মুখে (রাজু নামের ওই ডাক্তারকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার আগে মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশ ইত্যাদি আয়োজন করতে হয়েছে)।
খবরের কাগজে এ রকম লজ্জাকর খবর নেই—এমন কোনো একটি দিন পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ, বিয়ের আশ্বাসে ধর্ষণ, শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীকে, নানান প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ—নৈমিত্তিক খবর এখন। পাশাপাশি মেয়ের শ্লীলতাহানির বিচার না পেয়ে বাবার আত্মহত্যা (পঞ্চগড়ের মাগুরা ইউনিয়নের একটি গ্রামে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ঘটনা)।
কয়েক মাস আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক কর্তৃক অপর একজন নারী শিক্ষকের প্রতি কটু বাক্যবর্ষণ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শনসহ যৌন হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভাগের সভাপতি মাহবুবা কানিজ কেয়া এই অপমানজনক অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে প্রতিকারের জন্য উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। যে বর্ণনা একজন নারীকে করতে হয়েছে ওই পত্রে, তা শুনলে বা দেখলে যেকোনো বিবেকবান মানুষের মাথা নত হবে, মন সংকুচিত হবে। অনেক দাবিদাওয়ার পরে তাঁর বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা অপরাধের তুলনায় নগণ্য।
কিছুদিন আগে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একজন নারী ইউপি সদস্যের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক ‘জুতাপেটা করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। ফৌজদারি অপরাধ তো ঘটেছেই। কিন্তু চরম রুচিহীনতার পরিচয় দিয়েছেন একজন জনপ্রতিনিধি।