রাজনৈতিক অঙ্গনে বছরব্যাপী উত্তেজনা-উত্তাপ এবং জনজীবনে ব্যাপক অশান্তির পর অবশেষে সম্পন্ন হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পর আওয়ামী লীগ আরও ৫ বছর থাকার সুযোগ পেল। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। এর আগে তিনি ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে সরকার পরিচালনা করেছিলেন। সেই বিবেচনায় এবার তিনি পঞ্চমবার সরকারপ্রধান হচ্ছেন।
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করাই ছিল সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। দেশের ভেতরে বিরোধী শিবিরের নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন এবং বিদেশি শক্তির অব্যাহত চাপ মোকাবিলা করেই শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে নির্বিঘ্নে। স্থানীয় পর্যবেক্ষক ছাড়াও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশি পর্যবেক্ষক এসেছিলেন নির্বাচন দেখতে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকেও পর্যবেক্ষক এসেছিলেন। বিদেশি পর্যবেক্ষকরা গণমাধ্যমকে বলেছেন, নির্বাচন ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ’ হয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর ঢাকায় নিযুক্ত ভারত, রাশিয়া ও চীনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুষ্পস্তবক দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কেউ যাননি বরং নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, সে দেশের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র সোমবার ওয়াশিংটনে বলেছেন, বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হয়নি। তিনি ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে অনিয়ম, সহিংসতা, বিরোধী দলের বিপুলসংখ্যক সদস্যকে গ্রেফতার এবং নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ না করার কথা উল্লেখ করেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর পরে অবশ্য আরেক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের বিজয়কে স্বীকৃতি দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ প্রতিক্রিয়ায় আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। তবে বাংলাদেশের প্রতি ওয়াশিংটনের মনোভাব পরিবর্তিত হয়েছে কিনা তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। কথাটা সঠিক। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের এটাই বড় সাফল্য। ৭ জানুয়ারি সারা দেশে ২৯৯টি আসনে বিকাল ৪টা পর্যন্ত অবাধে ভোটগ্রহণ চলেছে। কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়নি। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের গোলযোগ কোথাও হয়নি। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, প্রায় ৪২ শতাংশ ভোটার তাদের ভোট দিয়েছেন। ভোটার উপস্থিতির এ হারকে কমিশন সন্তোষজনক বলেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ভোটের আগের দিন বলেছিলেন, যদি ১ শতাংশ ভোটারও ভোট দেন, তাহলে সে নির্বাচনকে অবৈধ বলা যাবে না।
সিইসির বক্তব্য সঠিক। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব ভোটের আয়োজন সুসম্পন্ন করা, ত্রুটিমুক্ত ব্যবস্থাপনা রাখা, যাতে ভোটাররা অবাধে, নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নয়। এ দায়িত্ব ভোটপ্রার্থীদের তথা নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলের। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রায় ৪২ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিকে খারাপ বলা যাবে না। তবে এটি ঠিক, আগের সংসদ নির্বাচনগুলোর তুলনায় এবারের ভোটার উপস্থিতির হার কম।