যাদের ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি খারাপ, নানা অপকর্মের জন্য প্রায় সর্বমহলে নিন্দিত, তাদের প্রার্থী হিসেবে কেন মনোনয়ন দিতে হয় আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দলকে? নীতি-নৈতিকতা বা আদর্শের কথা আপাতত এক পাশে সরিয়ে রাখলে, সহজ উত্তরটি হচ্ছে অর্থবিত্ত ও লোকবলে (পড়ুন, দাঙ্গাবাজ সমর্থক) যারা এগিয়ে থাকে, তাদের মনোনয়ন দিলে জিতে আসার ব্যাপারে তুলনামূলক নিশ্চিত থাকা যায়। দিন শেষে সংসদ সদস্য পদে বিজয়ীর সংখ্যাটাই তো কোনো দলের সরকার গঠনের মূল নিয়ামক। আদর্শের চেয়ে তাই সংখ্যার হিসাবটাই গুরুত্ব পায় বেশি।
কিন্তু যখন নির্বাচনটা সম্পন্ন হয় মূল বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে নিজেদেরই দুই উপদলে ভাগ হয়ে, সেখানে তো সরকার গঠন নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে না। তাহলে এমন লোককে বাছাই করার কারণ কী, যার অতীত কুকীর্তিতে ভরা?
বেশ কজন প্রার্থীর অতীত নিয়ে এ রকম বর্ণাঢ্য ইতিহাস রচনা করা যায়। আপাতত সেদিকে না গিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী ঘটনার সৃষ্টি হলো যাঁকে ঘিরে, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সেই মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়েই আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখতে চাই।
২০১৪ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মোস্তাফিজ। এর অব্যবহিত পর থেকেই মূলত এলাকাবাসী তাঁদের নতুন প্রতিনিধিকে ‘চিনতে’ শুরু করেন। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে তাঁর কথা অমান্য করায় তিনি পিটিয়েছিলেন একজন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে।
২০১৯ সালে নিজের গাড়িতে বসে তাঁর দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই বিষোদ্গারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন মোস্তাফিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বোধ হয় বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে গেল। কিন্তু তাঁর খুঁটির জোর কতটা, তা বোঝা গেল যখন এ ঘটনায় প্রকাশ্যে কোনো ক্ষমা প্রার্থনা বা অনুশোচনা ছাড়াই সমান দাপটে এলাকায় নিজের কারিশমা দেখিয়ে গেছেন তিনি।
২০২০ সালে বাঁশখালীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফের লাশ দাফনের আগে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান প্রদর্শন করতে দেননি মোস্তাফিজুর রহমান। প্রকাশ্যে দম্ভভরে এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সমস্ত অবদানকে অস্বীকার করে বলেছেন, ‘বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। ওই সময়ে আমি ক্লাস সেভেনের ছাত্র ছিলাম, আমি দেখেছি এই এলাকায় কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি।’