নির্বাচনে জনগণের দুই প্রবণতা
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে দুটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একটি হচ্ছে ‘নির্বাচন’ নিয়ে মাথা না ঘামানো। আরেকটি হচ্ছে হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করা। এর পেছনে কারণগুলো বোধগম্য। বেশির ভাগ মানুষ ভাবছে এটি আসলে একটি নির্বাচন নয়, কারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই; আছে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ভান। আর যেহেতু ফলাফল হচ্ছে বর্তমান শাসক দল কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত, অর্থাৎ নিশ্চিতভাবে বর্তমান সরকারের বিজয় এবং ধারাবাহিকতা রক্ষা, সেহেতু এটি কোনো ‘ইলেকশন’ নয় ‘সিলেকশন’ মাত্র। তবে ‘অলংকার’ যারা হতে চাচ্ছেন তাদের মধ্যে হয়তো প্রতিযোগিতা আছে, আর সেই প্রতিযোগিতা নির্বাচনে জয়লাভের চেয়ে বেশি ঘনীভূত হচ্ছে ‘কর্তৃপক্ষ’ যিনি বা যারা এ পূর্বনির্ধারিত ফলাফল সাজানোর দায়িত্বে আছেন তাদের আনুকূল্য লাভের জন্য সুযোগসন্ধানীদের প্রতিযোগিতায়।
তারা হয়তো বেশির ভাগ দীর্ঘদিন তৃণমূলে রাজনীতি করেননি। তারা কষ্ট করে, সাধনা করে ভোটারের মন জয় করার যে দীর্ঘ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থাকে তার ভেতর দিয়ে উঠে আসেননি। কোনো ক্রিকেট প্লেয়ার, কোনো অভিনেত্রী, বিপুল অর্থবিত্তের মালিক, কোনো আমলা, কোনো সাবেক দলীয় বা জোট নেতা বা মন্ত্রী এসবই হয়ে উঠেছে আগামী পার্লামেন্টে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর প্রধান বিবেচ্য যোগ্যতা। আবার এরাও প্রায় সবাই ভাবছেন শাসক দলের মনোনয়ন টিকিট পেলেই বিজয় নিশ্চিত। তাই এটি পাওয়াই ছিল প্রতিযোগী অলংকারগুলোর মধ্যে প্রধান প্রবণতা। কিন্তু সবাই যদি একটি দলেরই প্রার্থী হতে চান তাহলে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কীভাবে? বিরোধী দলের কার্যত অনুপস্থিতিতে যে নির্বাচন হবে তাকে আসলে গণতান্ত্রিক নির্বাচন বলা যাবে কি? সেজন্য কেউ কেউ বর্তমান নির্বাচনকে নামকরণ করেছেন ‘অভিনয়ের নির্বাচন’ বা ‘তামাশার নির্বাচন’।
কিন্তু এ নির্বাচনে আরেকটি বিপরীত প্রবণতাও সৃষ্টি হয়েছে। সেটি কী? এটি হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিচিত্র সমাহার। দেখা যাচ্ছে, খোদ শাসক দলের মধ্যেই অনেকে ‘বিরোধী দলের’ বিকল্প বা Subs titiute Ins tance হতে চাচ্ছেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের আবার শাসক দল যে শুধু উৎসাহিত করছে তা-ই নয় কোথাও কোথাও শোনা যায়, নিজের দলীয় মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্ররা যাতে জয়ী হন সেজন্য গোপনে তাদের নানাভাবে সাহায্য ও আর্শীবাদ করছেন। আর এটাও আমরা দেখছি, স্বতন্ত্র প্রার্থীরা অনেকেই দাবি করছেন যে তারাও নৌকার রাজনীতিতে বিশ্বাসী, নৌকার মূল মাঝির আর্শীবাদও নাকি গোপনে তার প্রতিই আছে (!), যদিও অফিশিয়ালি তারা নৌকা প্রতীক থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং অন্য প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করবেন। সুতরাং এ নির্বাচনে দ্বিতীয় প্রবণতা হচ্ছে, শাসক দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট ব্যাপক অনৈক্য, পারস্পরিক বিবাদ ও বিশৃঙ্খলা। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সব ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া শেষে কোন নিট প্রবণতাটি প্রধান নির্ধারক প্রবণতায় পরিণত হবে? বা এসবের end result হবে?