জাতীয় নির্বাচন: নিরপেক্ষতা বলে কিছু আছে কি

ডেইলি স্টার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:০৩

জাতীয় নির্বাচন এক ধরনের সর্বজনীন উৎসব। আমাদের দীনহীন বিবর্ণ জীবনে উৎসবের খুবই অভাব; সর্বজনীন উৎসব হিসেবে আছে, কাজে নেই। পাঁচ বছর পর পর সর্বজনীন নির্বাচনী উৎসব আসবার কথা, সময়টা বেশ বড়, চার বছর হলে ভালো ছিল; কিন্তু পাঁচ বছর পরেও তো সব সময়ে এই উৎসব আসে না।


নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হয়। তবে ভোটারদের মধ্যে নয়, প্রার্থীদের মধ্যেই। প্রার্থী হতে অস্থির ব্যক্তিরা টাকা ঢালো, তাদের সমর্থকরা উন্মাদনা প্রকাশ করে। এ উন্মাদনা ভোট পর্যন্ত ও ভোটের দিনেও থাকবে। কারণ দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত এই নির্বাচনে মানুষ চাইবে নিরাপদে ভোট দিতে। পছন্দ মতো ভোট দিতে পারলে তারা সুখী হবে।


কিন্তু নির্বাচন নিয়ে প্রহসনের যে পরম্পরা চলছে তাতে ভোটারবিহীন নির্বাচন হলে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের কোনো অবকাশই থাকবে না। বিগত নির্বাচনগুলো তারই প্রমাণ দিয়েছে। তবে যথার্থ সুখের জন্য যা প্রয়োজন তা হলো তাদের ভাগ্য-পরিবর্তন। সব সময়েই তারা আশা করে আগের সরকারের চেয়ে পরের সরকার ভালো হবে, ফলে তাদের ভাগ্যে কিছুটা পরিবর্তন ঘটবে। কিন্তু তা ঘটে কি? ইতিহাস কী বলে? এবার তো সুযোগ নেই, একদলীয় নির্বাচনে।


ভাগ্য-পরিবর্তনের আশা দেখা দিয়েছিল দু'টি ঐতিহাসিক নির্বাচনে; একটি ১৯৪৬-এর, অপরটি ১৯৭০-এর। রীতিমত গণরায় বের হয়ে এসেছিল; কেবল যে সরকারের বিরুদ্ধে তা নয়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেই। তাতে রাষ্ট্রের ভৌগোলিক আয়তনে বদল ঘটেছে, কিন্তু পুরাতন রাষ্ট্রের কলকব্জা, ধরন-ধারণ, আইন-কানুন, নাগরিক নিপীড়ন, মানুষের নিরাপত্তাহীনতা, সবকিছু সেই আগের মতোই রয়ে গেল। দুই দুইবার স্বাধীন হবার পরেও হতভাগ্য এই দেশে আমলাতন্ত্রের দুঃশাসন কমবে কী, উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বেড়েছে ধনবৈষম্য। এত বৈষম্য এদেশে আগে কেউ কখনো দেখেনি।


সত্তরের নির্বাচনের পর একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধে যে চেতনাটি শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল সেটি ওই ভাগ্য-পরিবর্তনেরই। নির্দিষ্ট অর্থে সেটা মুক্তির। মুক্তির জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা তো অবশ্যই দরকার ছিল; কিন্তু কেবল ওই প্রাপ্তিতেই যে কাজ হবে সে বিশ্বাস মানুষের ছিল না। সাতচল্লিশের ব্যর্থ স্বাধীনতা একেবারে ঘাড়ে ধরে প্রমাণ করে দিয়েছিল যে মুক্তির জন্য সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয়। কয়েকজন রাজা হয়ে থাকবে বাদবাকিরা গোলামি করবে, এ ব্যবস্থা মানুষের মুক্তি আনবে না। প্রত্যাশাটা ছিল সবার জন্যই থাকবে সমান অধিকার ও সমান সুযোগ। তেমনটা ঘটেনি। মুক্তি আসেনি।


স্বাধীন বাংলাদেশের গত বায়ান্ন বছরের ইতিহাস মূলত বৈষম্য বৃদ্ধিরই ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আসলে ছিল একটি সমাজবিপ্লবের চেতনা। কিন্তু হায়, সে-বিপ্লব ঘটলো না। উন্নতি হয়েছে, রীতিমত হুলুস্থূল করে; কিন্তু সে-উন্নতি পুঁজিবাদী, যার চালিকা শক্তি মুনাফালিপ্সা, এবং যার অনিবার্য অনুষঙ্গ হচ্ছে নানা রকমের বৃদ্ধি; যেমন লুণ্ঠনের, ভোগবাদিতার, বিচ্ছিন্নতার, দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারের, প্রকৃতির ওপর নির্দয় আচরণের। মনুষ্যত্ববিনাশী এসব তৎপরতা আমরা দেখছি, এবং বাধ্য হচ্ছি মেনে নিতে।


এই সার্বিক দুর্দশার ভেতরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে কয়েকটি সত্য আরও পরিষ্কার হচ্ছে। একটি হলো টাকার ভূমিকা। টাকা মনে হয় উড়ছে; কিন্তু এই উড়ন্ত পাখিরা মনিবের পোষ-মানা, তারা অন্য পাখিদের ভাগিয়ে নিয়ে আসবে। যারা টাকা খাটিয়েছে নির্বাচিত হলে সে-টাকা তারা বহু গুণে তুলে নেবে। ক্ষমতাসীনদের নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদ বৃদ্ধির পুরো ছবিটা কখনোই পাওয়া যায় না, কিন্তু যা পাওয়া গেল তাতেই লোকের চোখ ধাঁধিয়ে গেছে। বোঝা গেছে ক্ষমতার কী শক্তি!

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন
ঘটনা প্রবাহ

ট্রেন্ডিং

সংবাদ সূত্র

News

The Largest News Aggregator
in Bengali Language

Email: [email protected]

Follow us