নেত্রকোণা থেকে ছেড়ে আসা মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবারের যাত্রায় নিরাপদে পেরিয়ে আসে ১৩ ডিসেম্বরের ভয়াবহ গাজীপুরের বনখরিয়ার চিনাই রেলব্রিজ এলাকা।
শেষ রাতের ট্রেনের যাত্রীদের মনে কি তখন স্বস্তি ছিল? আর কিছুটা পথ পেরোলেই নিরাপদ গন্তব্য—এমন আশা নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল কি তিন বছরের ইয়াসিন? আরামদায়ক উষ্ণ কোলে সন্তান আগলে কারও পথ চেয়েছিলেন কি নাদিরা আক্তার পপি? এখন আর কিছুই জানার উপায় নেই। শীতের ভোরে ঢাকার তেজগাঁও রেল স্টেশনের কাছে হরতালের দেওয়া আগুনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে পুড়ে ছাই হয়ে গেছেন তারা।
ফেরা যাক পেছনে। এ যেন কোনো থ্রিলার সিনেমার কাহিনি। কিংবা এরচেয়েও রহস্যময় কোনো ঘটনা। বরযাত্রী যাওয়ার কথা বলে ভাড়া করেন মাইক্রোবাস। তারপর শহরের নানান প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয় বিভিন্ন সরঞ্জাম। রেললাইন কেটে ফেলে ঘটানো হয় ভয়াবহ নাশকতা। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরে। বিএনপির নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে।
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, মঙ্গলবার। রাত নেমেছে শহরে। শীতের রাতে গাজীপুর শহর অনেকটাই শুনশান। সন্ধ্যার পর ঢাকায় বরযাত্রী যাওয়ার কথা বলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন দুই তরুণ। কিন্তু ঢাকা না গিয়ে গাড়ি গিয়ে ঘুরতে থাকে শহরের বিভিন্ন রাস্তায়। ততক্ষণে সবাই পরে নিয়েছেন মুখোশ।
চালকের সন্দেহ হলে, ঢাকা যাওয়ার তাড়া দেন। এক যুবক মুখোশ খুলে নিজের পরিচয় দেন। ভয়ে চালক আর কোনো কথা বলেন না। রহস্যময় আরোহীরা শহরের জোড়পুকুর পাড় এলাকার একটি বাড়ি থেকে গাড়িতে তোলেন রেললাইন কাটার যন্ত্রপাতি। দক্ষিণ সালনার একটি রেস্টুরেন্ট থেকে তুলে নেন দুটি গ্যাস সিলিন্ডার। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতারের পর এমন দাবি করে পুলিশ।
ঘড়ির কাঁটায় রাত বেড়েছে। শহর আরও ফাঁকা হয়েছে। পথঘাট প্রায় জনশূন্য। পুলিশের প্রকাশ করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায় মাইক্রোবাসটি থেমেছে শিমুলতলির এক রেস্টুরেন্টের সামনে। একে একে গাড়ি থেকে নেমে আসেন রহস্যময় যুবকরা। রেস্টুরেন্টে ঢুকে ভরপেট খাওয়ার পর আসল মিশনের দিকে যাত্রা করেন তারা।
না, বরযাত্রী হয়ে ঢাকায় নয়, মাইক্রোবাস নিয়ে চলে যান জেলার শ্রীপুর উপজেলার প্রহল্লাদপুর ইউনিয়নের বনখরিয়ায়। চিনাই রেল ব্রিজের পাশে গাড়ি থামিয়ে, গ্যাসকাটার দিয়ে কেটে ফেলেন ২০ মিটার রেললাইন।
১২ ডিসেম্বর পেরিয়ে ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে গেছে ১৩ তারিখে। ভোর সোয়া চারটার দিকে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস এই এলাকা অতিক্রমের সময়ে কাটা রেললাইন থেকে ছিটকে পড়ে সাতটি বগি। নিহত হন এক সবজি ব্যবসায়ী। আহত হন কমপক্ষে দশজন।