কিংস পার্টি অর্থ রাজার দল। তবে আমাদের মতো দেশে রাজা অস্তিত্বহীন হলেও ‘কিংস পার্টি’ রয়ে গেছে। ধারণা করা হয়, ক্ষমতাসীন দল কিংবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এসব দল তৈরি হয়। এদের অবস্থা দাঁড়ায় যেমনে নাচাও তেমনে নাচি ধরনের। স্বাভাবিকভাবেই হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দলগুলোর জনসমর্থন বা ভিত্তি নেই।
ক্ষমতাসীনদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি না থাকায় এবারের নির্বাচনে কিংস পার্টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, কিংস পার্টি ততই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠছে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের কাছ থেকে আসনের ব্যাপারে কোনো ছাড় না পওয়ায় পার্টিগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন। সোমবারের সমকালের প্রতিবেদনে যথার্থই এসেছে– ‘ঘোল খেল’ তিন কিংস পার্টি। দলগুলোর নাম দেখলেও বোঝা যায়, এগুলো আসলে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত। তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট (বিএনএম) এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। দলগুলো নিবন্ধন পেয়েছে, তাও বেশিদিন হয়নি। তৃণমূল বিএনপির বয়স সেদিক থেকে কিছুটা বেশিই বলতে হবে; নিবন্ধন পেয়েছে ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ; বিএনএম এবং বিএসপি নিবন্ধন পেয়েছে একই দিনে; এ বছরের ১০ আগস্ট।
রাজনীতির মাঠে এদের অজ্ঞাতকুলশীল বললে আদৌ ভুল হবে না। অথচ এমন কিছু দল আছে, যারা বহু বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পায়নি। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পর বিশেষভাবে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও বিএসপি– তিন দল ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা বললেও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় তিন দল মিলেও পুরো ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। এই পার্টিগুলো যে হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসেছে; যাদের সঙ্গে জনমানুষের কোনো যোগাযোগ নেই, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে হয়তো ক্ষমতাসীন দলের সিদ্ধান্তে। আওয়ামী লীগ তাদের জন্য আসন ছেড়ে না দেওয়ার অর্থ হলো, দলগুলো আরও অপাঙ্ক্তেয় হয়ে যাওয়া। এ অবস্থায় তারা এককভাবে নির্বাচন করলে জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার শঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কিংস পার্টি কথাটা এখানে বিগত ১/১১ সরকারের সময় চালু হলেও, এর আগের প্রতিটা সামরিক শাসনের সময় এদের দেখা গেছে। তবে এ দফায় মূলত গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আগে এ ধরনের কিংস পার্টির উদ্ভব ঘটেছে। শক্তিশালী বিভিন্ন দলের বর্জনের মধ্যে এরাই বিরোধী দল দেখানোর জন্য কিংবা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর ভরসা জোগায়।
এবার যে কিংস পার্টিগুলো এমন ধাক্কা খেল, তার পেছনে অবশ্য আরেকটা কারণ আছে। এবার নির্বাচনী খেলায় আমাদের মূলধারার কিছু রাজনৈতিক দলই কিংস পার্টি হয়ে উঠছে। তাই এখন এমন প্রশ্নও উঠছে, বিরোধী দল তাহলে কে হবে?