হলফনামা কি কেবলই দেখার জন্য? নাকি দেখার পর প্রশ্নও করা যাবে? এই বাংলায় সে-এক সময় ছিল, যখন রাজনীতির কেন্দ্রে ছিল জনগণ। জনগণের জন্য রাজনীতিবিদরা সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেন, এমনকি সাধের জায়গা-জমি, হালের গরু-মহিষ, জমানো টাকা-পয়সা, কেউ কেউ তো ঋণ করেও মানুষের পাশে দাঁড়াতেন। মানুষের কল্যাণ, সমাজের মঙ্গল, দেশের হিতসাধনই ছিল সেসব দিনের রাজনীতিবিদদের ব্রত।
এসব করতে গিয়ে রাজনীতিবিদদের সম্পদ বাড়ত না, বরং কমতো এবং সেটা দৃশ্যমান হতো, সবাই সেটা টের পেত। কিন্তু, সেই দিন আর নেই। নেই যে, সেটা আমরা কোভিড-১৯ এর সময়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি। দুর্ভিক্ষের সময় রাজনীতিবিদরা নিজেদের চেষ্টায় লঙ্গরখানা খুলতেন। অথচ, করোনায় তারা নিজেরাই গৃহভ্যন্তরে চলে গেলেন। যেন, আপনি বাঁচলেই…।
তারপরও মানুষ রাজনীতিবিদদের প্রতি আস্থা হারায়নি। নিশ্চয় আগেকার সেই দিন ফিরে আসবে, এই প্রত্যাশায় বেঁধে আছে বুক। নির্বাচন এলেই জনগণ আশায় বুক বাঁধে, যেমনটা বেঁধে ছিল ব্রিটিশ-ভারতে, পাকিস্তানের দুই যুগে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের গত বায়ান্নো বছরে।
নির্বাচন আসে নির্বাচন যায়। কিন্তু জনগণ তাদের মনের মতো প্রার্থী বেছে নেওয়ার সুযোগ পায় না। আগের দিনের সেই রাজনীতিবিদদের দেখা মেলে না, যারা জনগণের জন্য নিজের আয়কৃত অর্থ, সঞ্চিত সম্পদ বিলিয়ে দেবেন। বিলিয়ে যে দেন না, তার বড় প্রমাণ মন্ত্রী-এমপিদের দেওয়া হলফনামা।
আমরা জানি, নির্বাচনী বিধিতে প্রার্থীদের হলফনামা জমা দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। যাতে পরিষ্কার ভাবে জানা যায়, প্রার্থীর অর্থনৈতিক সুরত ও আয়-ব্যয় এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের হালনাগাদ চিত্র। কিন্তু যে হলফনামা প্রার্থীরা দেন, তা কি আশা জাগায়, নাকি দ্বিধান্বিতও করে? এ কারণেই এই লেখার প্রসঙ্গ, হলফনামা কি কেবলই দেখার জন্য, নাকি প্রশ্নও করা যাবে?