বাংলাদেশের আগের দুটি নির্বাচনের তুলনায় আগামী নির্বাচন নিয়ে দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক পরিসরে যে আগ্রহ ও উদ্বেগ একটু বেশি, তা ইতিমধ্যে মোটামুটি স্পষ্ট হয়েছে। অনেকের ধারণা, বিভিন্ন দেশের বাড়তি আগ্রহের কারণ ভূরাজনীতির প্রশ্ন, আবার কারও কারও মতে বাণিজ্যিক স্বার্থ। তবে নির্বাচনে মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারেন এবং তার স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতা সুষ্ঠুভাবে হয়, সে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্র। তারা নির্দিষ্ট কোনো দলের পক্ষে নয় বলে বারবার মন্ত্র উচ্চারণ করলেও সরকার, ক্ষমতাসীন দল ও তাদের অনুসারীরা অভিযোগ করে চলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
কয়েকটি বৃহৎ শক্তির পক্ষ থেকেও একই অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রাশিয়া সরাসরি বলেছে, বাংলাদেশে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবির আড়ালে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের সরকার প্রকাশ্যে এমন কিছু না বললেও সেখানকার পত্রপত্রিকা ও বিশ্লেষকেরাও বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন দাবির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা হচ্ছে। চীনও এ বিষয়ে পিছিয়ে নেই। তারা কোনো দেশের নাম সরাসরি না বললেও স্পষ্ট করে বলেছে যে বাংলাদেশের নির্বাচনে বাইরের হস্তক্ষেপের চেষ্টা হচ্ছে এবং তারা তা সমর্থন করে না।
গত ৯ নভেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তাঁর সর্বসাম্প্রতিক মন্তব্যে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে চীন বাইরের কারও হস্তক্ষেপ চায় না। চীন নিজেও অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। সংবিধান ও আইন অনুযায়ীই বাংলাদেশের নির্বাচন দেখতে চায় চীন।’ ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত এক সেমিনারে বাংলাদেশে স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়ে রাষ্ট্রদূত ইয়াও বলেন, চীনের বিপুল বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাঁর দেশ নির্বাচনের পরও বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা দেখতে চায়। স্থিতিশীলতার যুক্তির মানে দাঁড়ায়, নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন তারা চায় না। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে সরকার বদলে যাবে—এমন ধারণার ভিত্তিতে স্থিতিশীলতা চাওয়া যদি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না হয়, তাহলে বলতেই হয়, বিষয়টির নতুন করে সংজ্ঞায়ন করতে হবে।
সাধারণভাবে বিদেশি কূটনীতিকদের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম এড়িয়ে চলার কথা। যদিও বিভিন্ন দলের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে তঁাদের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে হাজির হয়ে দর্শকের আসন গ্রহণের রীতি চালু আছে। রাজনীতিকদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ কিংবা দুই দেশের স্বার্থ-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনায় কোনো বাধা থাকার কথা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত ৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতার সঙ্গে মতবিনিময়ের পর সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন। তবে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হলেই সবাই একটু নড়েচড়ে ওঠেন। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তৃতা করার একমাত্র রেকর্ডটি রয়েছে চীনা কূটনীতিকদের।