ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি কিশোরী মেয়ের মরদেহ পাওয়া গেছে। পুলিশ ধারণা করছে মেয়েটি যৌনকর্মী ছিল। টাকার হিসাব নিয়ে খদ্দেরের সাথে মতবিরোধের কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। যে দুজন নির্মাণ শ্রমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের আটক করা হয়েছে। একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমের ভিডিওতে এ খবরটির নিচে কেউ কেউ হাসির ইমো দিয়েছেন। অনেকে বলেছেন যেমন কর্ম, তেমন ফল। তবে হ্যাঁ অনেকেই এসব মন্তব্যের বিরোধিতাও করেছেন।
যারা হাসির ইমো অর্থাৎ হা হা রিঅ্যাকশন দিয়েছেন, তারা কি একবারও ভেবে দেখেছেন যৌনকর্মীদের কাছে কারা যাচ্ছেন? আপনার আমার মতো এই সমাজের মানুষ। এদের মধ্যে শিক্ষিত, নিরক্ষর, উচ্চশিক্ষিত সবাই আছেন। বিভিন্ন পেশার, এমনকি ধর্ম পেশার সাথে জড়িত মানুষও সেখানে যান। এরা সমাজে যার যার মতো প্রতিষ্ঠিত এবং স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিশ্চয়ই রয়েছে পারিবারিক পরিচয়। এই মানুষগুলোই বাইরে বেরিয়ে এসে বড় বড় কথা বলেন। কিন্তু এদের আপনারা ঘৃণা করেন না, হয়তো সুযোগ মতো সালামও করেন। অথচ একজন দরিদ্র যৌনকর্মী মারা গেলে খুশি হন। যারা এদের কাছে নিয়মিত যাচ্ছেন, ঘৃণা করা উচিত তাদের।
একটি মেয়ে কেন এই নিকৃষ্ট ও অমানবিক পেশায় আসেন, কীভাবে এখানে জীবনযাপন করেন, কী তাদের সামাজিক পরিচয়, এই দেহব্যবসার অর্জিত আয় দিয়ে তাদের কতজনের পরিবার ও সন্তান চলে, সেই কথা আমরা অনেকেই জানি না। পৃথিবীর আদিমতম এ পেশাকে সবাই ঘৃণা করি। এতটাই ঘৃণা করি যে মৃত্যুর পর তাদের কবর দেওয়ার ও দাহ করার অধিকারও ছিল না কিছুদিন আগে।
এমনকি জানাজাও পড়ানো হতো না। অথচ এদের কাছে যারা যান, যারা তাদের ভোগ করেন, যারা বাবু হিসেবে এ ব্যবসা চালান, তারা কিন্তু ঠিকই মর্যাদার সাথে কবরস্থ হন। একবারও সমাজ বলে না এই লোকের জানাজা পড়বো না, কবর দেবো না। যার কাছে যাচ্ছে, সে হয়ে যায় অচ্ছুৎ আর যে যাচ্ছে, সে হয় পুত-পবিত্র। কী অদ্ভুত সিস্টেম এই সমাজের।