সরকারের সদিচ্ছা থাকলে যে কোনো ধরনের একটা বোঝাপড়ায় বিএনপিকে নির্বাচনে আনা সম্ভব হতো। কিন্তু তাদের সেই আন্তরিকতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। তাদের ছক মেনে বিএনপি নির্বাচনে না আসায় পরিস্থিতি আরও জটিল ও সংঘাতময় হয়ে উঠেছে। বিরোধীদের সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়ে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের দিকে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। দেশকে দীর্ঘ মেয়াদে অস্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে সরকার এর দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারবে না।
একটি রাজনৈতিক দলের অনেক দোষত্রুটি থাকতে পারে। এমনকি গুরুতর কোনো অভিযোগও থাকতে পারে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দল যদি নিষিদ্ধ না হয় এবং দেশে তাদের অবস্থান থাকে, তাহলে তাদের বক্তব্য শোনা ও বিবেচনা করা সরকারের দায়িত্ব। সরকারের দায়িত্ব জনস্বার্থে কাজ করা; একই সঙ্গে বিরোধীদের যৌক্তিক দাবি আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণ ও একটি বোঝাপড়ায় আসা। এগুলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাধারণ চিত্র ও চর্চা। আমাদের দেশে সে অবস্থা কখনও ছিল না; নেই। আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া এ দেশের মানুষ কোনো কিছুই অর্জন করেনি। বর্তমান শাসক দলও এই বাস্তবতার মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু তারা তাদের অতীত ভুলে গেছে। ক্ষমতার মোহে বেপরোয়া হয়ে বিপদের দিকে হাঁটছে। কথাগুলো মোটেই নতুন কিছু নয়। ইতিহাসে এর অনেক উদাহরণ আছে। সেই শিক্ষা নেওয়া ও উপলব্ধি করার প্রয়োজনীয়তা এখানেই।
নির্বাচন হয়তো হবে, তবে জাতিকে অনেক মূল্য দিতে হবে। কোনো অপরাধ না করে জাতি কেন দুর্ভোগ ও ক্ষতির শিকার হবে? এই ক্ষতি ক্ষুদ্র ও স্বল্পকালীন নয়। বলা যায়, বিশাল ও দীর্ঘমেয়াদি। কীভাবে, কতটা ক্ষতি হতে পারে, তার কিছুটা ধারণা নেওয়া যাক।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই নাজুক। যুদ্ধ ও বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি একে আরও জটিল করে তুলেছে। দ্রব্যমূল্য দিন দিন বাড়ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়ছে। ব্যাংকগুলো সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ প্রধানত তিন ধরনের সংকটের সম্মুখীন হবে– ১) আর্থিক ও ব্যবস্যা-বাণিজ্যের সংকট; ২) হরতাল-অবরোধ আন্দোলনে মানবিক ক্ষতি; ৩) রাজনৈতিক সংকট ও অস্থিতিশীলতা। যে অর্থ ব্যয়ে এই সংসদ, সরকার হবে; চলমান আর্থিক সংকটের জন্য হবে সেটা বাড়তি চাপ। সে সংকট আসন্ন সরকার তা পুষিয়ে উঠবে কীভাবে, কোন জাদুবলে?